আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের সাতটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাব ঋণাত্মক রেখেই বিনা বাধায় লেনদেন করছিল। এতদিন এসব ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে যেকোন পরিমাণ টাকা উত্তোলন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ‘বিশেষ আনুকূল্যে’ প্রাপ্ত লেনদেনের এ সুবিধা এবার রদ করে দেওয়া হলো।
আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) থেকে ১ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের চেক নগদায়ন করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের যোগদানের আগেই এমন নির্দেশনা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক নির্দেশনায় এস আলমের সব ব্যাংকে এই বিশেষ সুবিধা বন্ধ করতে বলেছে দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ থেকে সব ব্যাংককে মৌখিক নির্দেশনার মাধ্যমে জানানো হয়, বুধবার থেকে ৭টি ব্যাংকের ১ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের চেক নগদায়ন করা যাবে না। ব্যাংকগুলো হলো– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ন্যাশনাল ব্যাংক। মূলত এস আলমের বেনামি ঋণ এবং আমানতের টাকা আটকাতেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোকে এই বিশেষ উপায়ে লেনদেন বন্ধের হুঁশিয়ারি করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি হিসাবে ঘাটতি মেটাতে না পারলে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সিআরআরসহ চলতি হিসাবে ঋণাত্মক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এছাড়া সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ব্যাংক দুটির চলতি হিসাবে কোনও ঘাটতি নেই। তবে ব্যাংক দুটি সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারে না।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এছাড়া– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ঘাটতি ৭ হাজার ১২৮ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৮১ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৭৯৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৭১২ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৯২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই ব্যাংকগুলো বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা সব উপকরণ বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ফেলেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করার কোনও উপকরণ এসব ব্যাংকের হাতে নেই। আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে যে জরিমানা দিতে হয়, তাও পরিশোধের সুযোগ নেই। ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংকগুলোকে এতদিন চলতি হিসাব ঋণাত্মক রেখে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।