লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি ও পরিকাঠামোর পর্যালোচনা করতে সেনা প্রধান নরবণে লে এসেছেন। দুই দিন ধরে এখানকার সেনা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন।
ইতিমধ্যেই লাদাখে প্রায় দশ হাজার ভারতীয় সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। তিনটি বলয়ে এই সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। পাহাড়ে যুদ্ধের বিশেষ ক্ষমতা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিখ, গোর্খা, ইন্দো টিবেট বর্ডার ফোর্সের ব্যাটেলিয়নকে বেশি করে মোতায়েন করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপনাস্ত্র। মাঝে মধ্যেই যুদ্ধবিমান লে থেকে উড়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে চক্কর দিয়ে আসছে। স্থানীয় স্তরে উত্তেজনা বাড়তে পারে, সংঘর্ষ হতে পারে মনে করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সেনা প্রধান আলোচনার পর ঠিক করবেন।
এই পরিস্থিতিতে আর কী দরকার, কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সংঘর্ষ হলে কী করা দরকার সেই সব বিষয় নিয়ে সেনা প্রধান আলোচনা করবেন। তিনি পুরো সেনা ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখবেন। তারপর উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই সেনা প্রধানের লাদাখ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার ভারত-চীন লেফটানান্ট জেনারেল পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। ভারতের তরফ থেকে প্রতিবারই সাত-আটটি বিষয় আলোচনায় তোলা হয়। চীনকে ম্যাপ দিয়ে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দুই কিলোমিটারের মধ্যে চীন প্রচুর নির্মাণকাজ করেছে। যা তারা করতে পারে না। এ গুলি ভেঙে দিতে হবে। চীনা সেনাকে ৪ মে-র আগের অবস্থানে যেতে হবে। অর্থাৎ, তারা যে এগিয়ে এসেছে, সেখান থেকে পিছনে চলে যেতে হবে। সেনা সমাবেশ কমাতে হবে।
সোমবারের বৈঠকেও বিষয়গুলো উঠেছিল। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। এই সামরিক পর্যায়ে আলোচনায় অবশ্য খুব বেশিদূর যাওয়া যায় না। এই আলোচনা থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার ভিতটা তৈরি হয়। সেনা সূত্রে খবর, সোমবারের বৈঠকে চীন সেনা পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বরং তারা বারবার ভারতকে লাদাখে সেনার সংখ্যা কমাতে বলেছে।
চীনের আরও সুবিধা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায়। গত শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে মোদী বলেছেন, ভারতের জমিতে চীনা সেনা নেই। ভারতের কোনো পোস্টও তাঁদের দখলে নেই। এরপরই গালওয়ান উপত্যকাকেই তাঁদের এলাকা বলে দাবি করে চীন।
ভারতের পক্ষ থেকে চীনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকরতে পারবে। এর আগে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত সিদ্ধান্ত বদল করেছে। চীন অবশ্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
ভারত আবার লাদাখে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপনাস্ত্রও বসিয়েছে। চীনা বিমান বাহিনীর তৎপরতা দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রক অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথা বলেনি।
সোমবারই নয়াদিল্লিতে সেনা কর্তাদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে রাস্তাগুলি তৈরি করার কথা, তা জরুরি ভিত্তিতে করা হবে বা যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে তা দ্রুত শেষ করা হবে। চীন সীমান্তে ৩২টি রাস্তা তৈরি করছে ভারত। রাস্তা তৈরির কাজে দক্ষ সেনা কর্মীদের লাদাখে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের রাস্তা তৈরির কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। লে-তে ডয়চে ভেলেকে সেনা বাহিনীর এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, করোনার কারণে বহু ইঞ্জিনিয়ারকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল সেনা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের অনেককেই লে-তে উড়িয়ে আনা হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে রাস্তা এবং পরিকাঠামো তৈরির কাজে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে