ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক বলেছেন, হজযাত্রীদের স্বস্তি দিতে সরকার কাজ করছে। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) হজযাত্রী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
হজের খরচ কমানো হয়েছে জানিয়ে ধর্মমন্ত্রী বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার পরও আমরা গত বছরের তুলনায় এ বছর সাধারণ হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়েছি। যার পরিমাণ সরকারিভাবে এক লাখ চার হাজার ১৭৮ টাকা এবং বেসরকারিভাবে কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। হজযাত্রীরা যাতে একেবারেই যৌক্তিক খরচে হজব্রত পালন করতে পারেন, সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। এ ছাড়া কিভাবে হজযাত্রীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে দাপ্তরিক যে প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে, সেগুলো আরও সহজ করা যায়, কিভাবে হজযাত্রীদের আরেকটু বেশি কমফোর্ট দেওয়া যায়, সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় আমরা অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব, ইনশাআল্লাহ। সরকার হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।
তিনি আরো বলেন, কেউ চায় না হজযাত্রী কষ্ট পাক, হজযাত্রা অসুন্দর হোক। সরকারও করে না, সরকারের যারা প্রতিনিধি তারাও করে না, যারা সহযোগিতা করে তারাও করে না।
যারা এজেন্সির মালিক তারাও করে না। তারপরও গত বছর একজন এজেন্সি মালিক হাজিদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তারপরও একজন হজযাত্রী থেকে যায়নি। সবাই যেতে পেরেছেন। ওই এজেন্সি মালিককে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আড়েও পড়ুন: গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা
জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ জন্য এজেন্সি মালিকরা সচেতন হয়েছেন। তারপরও তাদের যদি কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি হয়, তাহলে আপনারা (হজযাত্রী) অভিযোগ দেবেন। আমরা সেটির শুনানি করে যার যতটুকু শাস্তি পাওয়া দরকার ততটুকু দেব।
ধর্মমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত এবং এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের জন্য হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এ দেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয়বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। কারণ, হজের জন্য বেশ বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া হজ জীবনে একবারই ফরজ। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সে জন্য অবশ্যই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহিহ ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা সবাই যাতে সহিহ ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন, সে জন্যই মূলত এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আপনাদের প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন, তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সব কিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রশিক্ষণটা যত ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবেন, আপনাদের দক্ষতা তত বেশি শাণিত হবে, আত্মবিশ্বাস ততটাই বাড়বে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা ও উৎকর্ষতার প্রধান হাতিয়ার হলো প্রশিক্ষণ। কোনো কিছু না বুঝলে প্রশিক্ষক যারা থাকবেন, তাদের জিজ্ঞাসা করবেন। যত বেশি প্রশ্ন করতে পারবেন, তত বেশি শিখতে ও জানতে পারবেন। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।
আড়ও পড়ুন : রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বিএনপি
হজযাত্রীদের উদ্দেশে ধর্মমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয় আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে। সে দেশের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে যাতে কোনোরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকবেন। আপনার কারণে দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকবেন।