ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সবার আগে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখনো ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক পদ ফাঁকা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু উপাচার্যের পদ খালি আছে, তা নয়। উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক পদ খালি পড়ে আছে। আগে এ পদগুলো এতটাই দলীয়করণ করা হয়েছে, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, প্রশাসনিক দক্ষতা আছে, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যোগ্য—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার (৩১ আগস্ট) নিজ বাসভবনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এটার মানে এই নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চমানের গবেষক-শিক্ষক নেই। দলীয় সংস্কৃতির কারণে যোগ্য অনেকে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা বৃহত্তর শিক্ষকসমাজের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এটাও একটা বড় সমস্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে দুর্নীতির চক্র তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঠিকাদারদের একটা দুর্ধর্ষ শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা রীতিমতো ভীতিকর। এ সমস্যা সমাধানের জন্য একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য শিক্ষককে ট্রেজারার নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়ার পর তারা দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছেন।
উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে যোগ্যদের খুঁজে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য আমার কাছে শত শত সুপারিশ আসছে নানা দিক থেকে। আমি আমার মতো যোগ্য, যাদের পদায়ন করা যায়, বিভিন্নভাবে খোঁজার চেষ্টা করছি। আশা করি যে অচিরেই আমরা অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে পারবো। আবার ইউজিসির চেয়ারম্যানের পদও শূন্য হয়ে আছে। সেটার জন্য বেসরকারি খাতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনার ক্ষেত্রে একটা অভিভাবকশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এখানে আমরা অতিদ্রুত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দুই-একজন মানুষকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করছি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভাবার জন্য অন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, যাদের নিয়োগ (প্রশাসনিক পদে) দেওয়া হচ্ছে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন না। কারণ তাদের অনেকেই কিন্তু পরে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তাদের অনেক অনুরোধ করে এখানে (প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া) আনা হচ্ছে। আশা করি, সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবার শান্তিপূর্ণভাবে চালু হবে, শিক্ষাক্রম চালু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, যেসব উপাচার্যকে এসব পদে নিয়োগ দিচ্ছি, সেখানে কিন্তু প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের একটা নিয়ম আছে, সিনেটের মাধ্যমে এবং নানা প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ হন। এ পদ্ধতি তো চালু থাকবেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, এখন আমরা নিয়োগ দিচ্ছি কীভাবে? আসলে পুরো পদ্ধতি গ্রহণের তো সময় নেই। আমাদের তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করতে হবে। কাজেই এটা সাময়িকভাবে নিয়োগগুলো দিতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে নিশ্চয়ই নিয়মানুগভাবে সবকিছু হবে।