বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এটি ‘গুরুতর অপরাধ’। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘মালাউনের বাচ্চা, এত সাহস, এহনো দোকান ছাড়োস না!’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনটিতে ঘটনা ও দ্বন্দ্বের প্রেক্ষপট উল্লেখ রয়েছে। কমিশন মনে করে, জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের উদ্ভব হলে তা পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্ট আদালতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেত। তা না করে ধর্মীয় বিষয় না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্ম টেনে আনা এবং চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অমর্যাদাকর ভাষায় কাউকে লাঞ্ছিত করা একদিকে যেমন শান্তিপূর্ণ অবস্থার মাঝে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও উসকানিমূলক আচরণ, অপরদিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে কমিশন মনে করে। বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এ বিষয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সই করা সুয়োমটোতে বলা হয়, রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে ওয়ারিশদের মধ্যে দোকানের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের শিকার ওই রেস্টুরেন্টের মালিক ও পরিচালক সুনীল কুমার দত্ত এবং তার কর্মচারীরা।
মানবাধিকার কমিশন জানতে পেরেছে, সুনীল দত্ত ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘মা রাঁধুনী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ চালু করেন। পরে রেস্টুরেন্টটির পেছনের দিকে মৌখিক চুক্তিতে আরও সম্প্রসারণ করেন। এতে তাকে মাসিক মোট ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। কিন্তু দোকানের প্রকৃত মালিক পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই মারা গিয়েছেন, যার সঙ্গেই মূলত ভাড়ার চুক্তি হয়েছিল। পরবর্তীতে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী এবং অন্য চার ভাইয়ের মধ্যে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের উদ্ভব হলে রেস্টুরেন্টের মালিক সুনীল দত্ত কাকে ভাড়া পরিশোধ করবেন তা বুঝে উঠতে না পেরে বেশ কিছু মাস ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেন। এতে তাকে ও তার কর্মচারীদের কখনও ‘ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক’ পরিচয়ে কিংবা কোনো রাজনৈতিক পদধারী ব্যক্তিসহ কে বা কারা চাঁদা দাবিসহ দোকান থেকে বের করে দিতে কিছু আপত্তিকর ও ধর্মীয় উসকানিমূলক ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী যায়।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, এ ঘটনায় ধর্মীয় উত্তেজনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেয়াসহ বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ অবস্থায়, অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে।