গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পুকুর থেকে ১২ বছরের এক শিশুর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছেন স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ও আরবি শিক্ষক হাফেজ মোরসালিন।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে প্রেস করফারেন্সে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এর আগে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ সরকারি কলেজের পাশে সরোবর নামে একটি পুকুর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হাফেজ মোরসালিন বড় সাতাইল বাতাইল জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও আরবি শিক্ষক। তিনি মসজিদ সংলগ্ন একটি কক্ষে থাকতেন। ওই শিশুটিকে মসজিদের মক্তবে পড়াতেন মো. মোরসালিন। শিশুটি তার নানার বাড়িতে থাকতো।
মোরসালিন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী গ্রামের মো. জাহিদুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নীলফামারীর জোড়াবাড়ী গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (২১), গোবিন্দগঞ্জের হিরোকপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে আলামিন হোসেন (২২) ও একই উপজেলার জঙ্গলমারা গ্রামের মোজাফফর আলী খন্দকারের ছেলে আরাফাত খন্দকারকে (১৭) গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রেস করফারেন্সে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোরসালিন ওই শিশুসহ আরও দুই শিশুকে মসজিদের মক্তবে পড়ান। পড়া শেষে মোরসালিন গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বর্ধনকুঠি এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে আরবি পড়াতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে রাস্তায় ওই শিশুটির সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাকে মসজিদ সংলগ্ন কক্ষটিতে নিয়ে আসেন। এরপর শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বাধা দিলে তার গলা টিপে ধরেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটি নিস্তেজ হলে তাকে ধর্ষণ করেন মোরসালিন।
এরপর শিশুটির মাথার হিজাব (স্কার্ফ) দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মোরসালিন শিশুটিকে সিমেন্টের খালি বস্তায় ঢুকিয়ে সাইকেলের পেছনে ক্যারিয়ারে বেঁধে দুই কিলোমিটার দূরে নিয়ে বর্ধনকুঠি এলাকার একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন। পরের দিন দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই শিশুর মামা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেন ও আরাফাত খন্দকারকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ।
তাদের মধ্যে মো. মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেনকে তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। আটক অন্যদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
ঘটনাস্থল থেকে মো. মোরসালিন সাইকেলে করে ওই শিশুটির মরদেহ বর্ধনকুঠি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকানে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে। এজন্য ওই দোকানের মালিককে পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) আবু লাইচ মো. ইলিয়াচ জিকু, সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহা, জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মো. মাহবুবুল আলম, গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মো. ইজার উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ডিবির উপ-পরিদর্শক নওশাদ আলী প্রমুখ।