শিশু গৃহকর্মী মিনতি খাতুন (১০)কে নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ শহরের ফজল খান রোডের বাসিন্দা ও সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক শিউলী মল্লিকা (৩৬)কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৯ জানুয়ারী শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় ।
রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি বাহা উদ্দিন ফারুকী জানান, গত ৭ জানুয়ারী শিউলি মল্লিকা তার বাসার গৃহকর্মী শিশু মিনতি খাতুন (১০) হারিয়ে গেছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এরপর ৯ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় শিশু মিনতিকে অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে শিক্ষিকা শিউলি মল্লিকার অমানবিক নির্যাতনের চিত্র বেড়িয়ে আসে।
শিশু মিনতি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়,প্রতিদিনের নির্মম নির্যাতন সইতে না পেরেই সে ওই দিন বাসা থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তিনি আরো জানান,মিনতির বাবা মক্কা হোসেন ও মা মমতা বেগম মারা গেছে মিনতির ৬ মাস বয়সেই। সে গৃহকর্মী নানী রহিমা খাতুনের কাছে বড় হয়। নানীর অভাবের সংসারে খাবার না পেয়ে ৯ বছর বয়সে সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ২৫০ শয্যাহাসপাতালের ডাক্তার নুরুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষিকা শিউলি মল্লিকার সিরাজগঞ্জ শহরের ফজল খান বোডের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যোগ দেয়।
এর মাস খানেক পর থেকেই শিউলি মল্লিকা শিশু মিনতির উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। গত ৭ জানুয়ারী শিউলির এ নির্যাতন সইতে না পেরেই এতিম মিনতি বাসা থেকে পালিয়ে যায়। অসুস্থ্য শরীর আর কান্নাকাটি দেখে ওই দিন সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট গ্রামের জাহানারা খাতুন নামের এক মহিলা মিনতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা ও খাবার কিনে দেয়।
এরপর তিনি মিনতিকে পুলিশের কাছে জমা দেন। খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন মিনতির খালু আবুল কাশেম। তিনি মিনতির কাছে থেকে সব শুনে নিজে বাদী হয়ে শিক্ষিকা শিউলি মল্লিকার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষিকা শিউলি মল্লিকাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার মিনতি খাতুন জানায়,খুব ছোট বেলায় বাবা ও মা মারা গেছেন। নানীর কাছে থেকে বড় হয়েছি। নানী অন্যের বাসায় কাজ করে যে খাবার পায় তাই খেয়েই আমাদের জীবন চলত। একটু পেট ভারে ভাল খাবার আশায় নানী আমাকে এখানে কাজে রেখে দেয়। কিন্তু ওই বাসার শিউলি আপা আমাকে প্রতিদিন নানা ভাবে মারধর করে। হাতের কাছে ঝাড়–,লাঠি,চামচ ও খুন্তি যা পায় তা দিয়েই মারে। আমি মাইর সইতে না পেরেই বাসা থেকে পালিয়ে যাই। আমি এখন তার হাত থেকে বাঁচতে চাই। আর শিউলি আপার বিচার চাই।