গাজা যুদ্ধে অসংখ্য বেসামরিক নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাটির বিশ্লেষণ দেখা গেছে, গত ছয় মাসের সময়সীমায় যাচাই করা নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইনের অভূতপূর্ব লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে যা ‘যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য সম্ভাব্য নৃশংস অপরাধের’ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় ৮,১১৯ জন নিহত হয়েছেন। যাচাইকৃত নিহতদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ শিশু এবং ২৬ শতাংশ নারী। নিহতদের মধ্যে ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, প্রায় ৮০ শতাংশই আবাসিক ভবন বা অনুরূপ বসতিতে নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এই অপ্রত্যাশিত মাত্রার হত্যা এবং বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের কারণ হলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো পালন করতে ব্যর্থ হওয়া।’
শুক্রবারের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য বিবিসি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
জাতিসংঘ জানায়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জনবহুল অঞ্চল থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ফলে ইসরায়েললি বাহিনীর নির্বিচারে গোলা বা ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করছে যা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আইডিএফ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং ‘বেঁচে থাকা মানুষদের আহত, গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি, খাদ্য বা স্বাস্থ্যসেবার অভাব তৈরি করেছে।’
উত্তর গাজায় পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, অক্টোবরের শুরুর দিকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে নতুন স্থল আক্রমণ শুরু করলে উত্তর গাজা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। জাতিসংঘ জানায়, অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে উত্তরে কোনও খাদ্য সহায়তা প্রবেশ করেনি।
ত্রাণ সংস্থা নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান জ্যান এগেল্যান্ড শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, গাজায় সাম্প্রতিক এক সফরে তিনি ‘অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞ’ প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে এমন কোনও ভবন নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর বড় বড় এলাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্তালিনগ্রাদের মতো দেখাচ্ছে। এই অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর উপর এই নির্বিচারে বোমাবর্ষণের তীব্রতা কল্পনাতীত বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এই নিষ্ঠুর যুদ্ধের মূল দিচ্ছে প্রধানত শিশু এবং নারী।’