ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরাটা সুখকর হলো ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। হতাশা সঙ্গী হলো ব্রাজিলেরও। ব্যালন ডি অরের মতোই যেন এবার দলের জয়টাও খোয়ালেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। তার পেনাল্টি মিসেই দূর্বল ভেনেজুয়েলার মাঠ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে হলো সেলেসাওদের।
শুধু পেনাল্টি মিসই নয়, গোলের একাধিক সহজ সুযোগও হাতছাড়া করেছেন স্বভাবজাতভাবে। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচে দাপট নিয়ে খেলেও ড্রয়ের হতাশায় পুড়তে হলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের, যার জন্য ভিনির দূর্বল ফিনিশিংকে দুষতেই পারেন ব্রাজিল সমর্থকরা।
অবশ্য, তাতে ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক রাফায়েল রোমোর অনবদ্য পারফরম্যান্সকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই একটুও। ম্যাচের পুরোটা সময় জুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন ৩৪ বছর বয়সী এ গোলরক্ষক। ভিনির ওই পেনাল্টি সেইভ ছাড়াও বেশ কয়েকবার দলকে বাঁচিয়েছেন বড় বিপদের হাত থেকে।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের ১১তম ম্যাচে দূর্বল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে ব্রাজিল। কিন্তু, আক্রমণে গিয়ে বারবারই হতাশ করেন ভিনি ও তার সতীর্থরা। ম্যাচের ৯ম মিনিটে বক্সে বল নিয়ে ঢুকেও ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে শট নিতে ব্যর্থ হন ভিনি। গোলরক্ষকের বাধার মুখে পাস দেন রাফিনিয়াকে। আর তিনি ওই বল উড়িয়ে মারেন বারের উপর দিয়ে। ১৪ তম মিনিটে বক্সে ঢুকে দারুণ এক জোরালো শট নেন গেরসন, কিন্তু তাও লক্ষ্যভ্রষ্ট।
২২তম মিনিটে আরেকটি সহজ সুযোগ মিস হয় ভিনির। অবশ্য এবার ভাগ্যকে কিছুটা দুষতে পারেন রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে পেনাল্টি এরিয়া থেকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পা; বলটা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতেও সমর্থ হয়ত; কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় গোলবার। কয়েক সেকেন্ড পর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া গেরসনের জোরালো শট বাঁ দিকে ঝাপিয়ে ফিরিয়ে দেন ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক রোমো।
এরপর ধীরে ধীরে নিজেদের খেলা কিছুটা গুছিয়ে নিতে শুরু করে ভেনেজুয়েলা। চেষ্টা চালাতে থাকে প্রতি আক্রমণের। ২৮তম মিনিটে ভুল পাস দিয়ে বিপদ প্রায় ডেকেই এনেছিলেন এডারসন। এগিয়ে এসে ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে ভেনেজুয়েলার শট না ঠেকালে গোল প্রায় হজমই করে বসেছিল সেলেসাওরা। ৪০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সে দারুণ আরেকটি সুযোগ মিস করেন স্যাভিনিও। অনেক চেষ্টার পর ৪৩তম মিনিটে সফলতার মুখ দেখে ব্রাজিল। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে রাফিনিয়ার নেওয়া বাঁকানো শট পোস্টের দুরূহ কোণে লেগে জালে জড়ায়। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি রোমো।
পরে এই এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল। কিন্তু বিরতির পর মাঠে নেমেই সেলেসাওদের চমকে দেয় ভেনেজুয়েলা। বক্সে স্যাভারিনোর পাস পেয়ে এগিয়ে এসে বুলেট গতির শট নেন বদলি নামা তেলাসকো সেগোভিয়া। বলের গতির কাছেই পরাস্ত হন এডারসন।
তবে, ব্রাজিলকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেন ভিনি। ৫৯তম মিনিটে বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত ধরে বক্সে ঢুকার পথে ঝাপিয়ে পড়ে বাধা দেন ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক। ভিআর চেকে ফাউল ধরে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু স্পটকিকটা ঠিকঠাক নিতে ব্যর্থ হন রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। যদিও আরেকবার সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু ফিরতি বলও জালে জড়াতে ব্যর্থ হন ভিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের আগ মুহূর্তে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ভেনেজুয়েলা। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে মাঠে ঘটে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। যোগ করা সময়ের শেষ দুই মিনিট বাকি থাকতে মাঠের পানির নলগুলো হঠাৎ ছেড়ে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ঝাড়েন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। জোরালো প্রতিবাদ করে লাল কার্ড দেখেন ব্রাজিলের সহকারী কোচ। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর পানির নলগুলো বন্ধ হলে রেফারি আবার খেলা চালিয়ে যান। এরপর আরও তিন মিনিট খেলা হলেও সুবিধা করতে পারেনি সেলেসাওরা।
১১ ম্যাচে ৫ জয় ও ২ ড্রয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত কনমেবল অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তৃতীয় স্থানে আছে সেলেসাওরা। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বরে অবস্থান করছে ভেনেজুয়েলা। অন্যদিকে এক ম্যাচ কম খেলে ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচটি আগামী ২০ নভেম্বর শক্তিশালী উরুগুয়ের বিপক্ষে। ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বর স্থানে আছে তারা।