হিজরি বছরের নবম মাসকে বলা হয় ‘রমজান’। যেটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস। এ মাসজুড়ে মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। আর এই এক মাস রোজা রাখলে শরীরে ঘটে নানা পরিবর্তন।
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবছর কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখেন। কয়েক বছর ধরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে রোজা গ্রীষ্মকালে হওয়ায় গরমের মধ্যে অনেক দীর্ঘসময় ধরে মুসলিমদের রোজা রাখতে হচ্ছে। আর এই সময় দৈনন্দিন জীবনযাপনের বাইরে গিয়ে দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় শরীরে এর বিশেষ প্রভাব পড়ে।
প্রথম কয়েকদিন: সবচেয়ে কষ্টকর-পয়েন্ট আকারে যাবে
রোজার প্রথম কয়েকদিন শেষ খাবার খাওয়ার পর আট ঘন্টা পর্যন্ত শরীরে তেমন প্রভাব পড়ে না। মূলত আমরা যে খাবার খাই, পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে অন্তত আট ঘন্টা সময় নেয় শরীর। যখন এই খাদ্য পুরোপুরি হজম হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশীতে সঞ্চিত গ্লুকোজ থেকে শক্তি নেয়ার চেষ্টা করে। শরীর যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে, তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। তবে এই সময়ে যেহেতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে যায়, সে কারণে কারও কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
৩ হতে ৭ রোজা: পানিশূন্যতা থেকে সাবধান-পয়েন্ট আকারে যাবে।
রোজার প্রথম কয়েকদিনের পর শরীর যখন রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে, তখন শরীরে চর্বি গলে গিয়ে তা রক্তের শর্করায় পরিণত হয়। কিন্তু রোজার সময় দিনের বেলায় যেহেতু খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই রোজা ভাঙ্গার পর অবশ্যই সেই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। নইলে মারাত্মক পানি-শূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দিন শেষে যে খাবার আপনি খাবেন সেখানে অবশ্যই শর্করা এবং চর্বি থাকতে হবে।
৮ হতে ১৫ রোজা: অভ্যস্ত হয়ে উঠছে শরীর- পয়েন্ট আকারে যাবে।
এই পর্যায়ে এসে রোজার সঙ্গে শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করে। বিষেশজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই এবং এর ফলে আমাদের শরীর অন্য অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারে না। কিন্তু রোজার সময় যেহেতু আমরা উপোস থাকি, তাই শরীর তখন অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। এটি শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।
১৬ হতে ৩০ রোজা: শরীর পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নেবে- পয়েন্ট আকারে যাবে।
এই সময় শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এক ধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে শরীর শুদ্ধ হয়ে উঠে। এসময় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। স্মৃতি এবং মনোযোগের উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি শরীরে অনেক শক্তি পাওয়া যায়।
মূলত সংযমের এই মাসটি আমরা কী খাই এবং কখন খাই, সেটার ওপর মনোযোগ দিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই রোজা রাখা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।