বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসে ইউরোপে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট সাত হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক শতাংশের কিছু কম। আগের বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ১০ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল সাত হাজার ৭৩৩ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের।
ইউরোপের বাজারে প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন, দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতার পরও এক শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এ খাত। এ সময় ইউরোপে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ তুরস্কের রপ্তানি সংকুচিত হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশটির।
তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ১০ মাসে চীন ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ২ হাজার ১৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। আগের বছর রপ্তানি করেছিল দুই হাজার ১৫৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পোশাক।
ইউরোপে দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। গত দশ মাসে ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে এক হাজার ৬৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৬২৮ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক।
ইউরোপে তৃতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ তুরস্ক রপ্তানি করেছে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার। আগের বছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল ৯১০ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ২০২৪ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ১০ মাসে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কমেছে।
করোনা পরবর্তী ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল। কিন্তু এক বছর না যেতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে পুরো ইউরোপ উচ্চমূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে। এতে মানুয়ের জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যায়। ফলে মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দেয়। কিন্তু ইউরোপে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হচ্ছে, যা ইতোমধ্যে ইতিবাচক ধারাতে ফেরা শুরু করেছে। একই সময় বাংলাদেশে উচ্চ জ্বালানি মূল্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ে। এর মধ্যেও প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএয়ের সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তা খুবই সামান্য। ইউরোপে আমাদের ১০ থেকে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকে। সেখানে শুল্কবিহীন, কোনো ট্যাক্স দেওয়া লাগে না, তারপরও যদি ভালো করতে না পারি, তাহলে তো হলো না। ইউরোপের বাজারে আমরা প্রথম দ্বিতীয় থাকব, এটাই স্বাভাবিক। সেই হিসেবে আমাদের চেয়ে অন্যদের কাছে থেকে তৈরি পোশাক বেশি কিনছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতায় টেকার জন্য বা ভালো করার জন্য বা ক্যাপাসিটি পূরণ করার জন্য কম প্রাইজেও কার্যাদেশ নিচ্ছি। আমি মনে করি, ইউরোপে আমাদের আরও ভালো করা উচিত। ইউরোপের বাজারে যদি আমরা ভালো না করতে পারি তাহলে কোথায়, কবে ভালো করব, বলেন এ উদ্যোক্তা।
বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গিয়েছিল। আবার প্রতিযোগিতাও বেড়ে গিয়েছিল। তার মানে হলো আমাদের ক্যাপাসিটি আগের মতোই রয়ে গেছে। ওদের ইমপোর্ট কমে গেছে। এতে আমাদের ক্যাপাসিটি পূরণ করার তাগিদ অনেক বেশি হয়ে গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ওরা তো চাইবেই কম দামে পোশাক কিনতে, সেটা আমিও চাইবো। তাই হয়েছে। তুলনামূলক কম প্রাইজে কার্যাদেশ নিতে হয়েছে। এর ফলে যে উৎপাদন করেছি তাতে মোট রপ্তানি আয়ে আরও খানিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারতো বলে জানান বিজিএমইএর এ পরিচালক।
বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। দেশটি ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে ছয় নম্বরে। বাংলাদেশ যেখানে দুই নম্বরে। তবে জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের দ্বিগুণ ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। যদিও বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করলেও ভিয়েতনামের রপ্তানি সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বাংলাদেশের আরও খানিক সতর্ক ও তৈরি পোশাক রপ্তানির দক্ষতাকে কাজে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।