কেউ প্রশ্ন তুলেছেন লকডাউনের যৌক্তিকতা নিয়ে। কেউ কার্যত হুমকি দিয়ে স্কুল-কলেজ খুলে দিতে চাইছেন। গত কাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস ‘তাঁদের’ কারও নাম করেননি। কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু দেশ ভুল পথে চলেছে। দেশের প্রধানদের একাংশ পরস্পর-বিরোধী মন্তব্য করছেন। ফলে তাঁদের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাসটাই উঠে যেতে পারে।
ইঙ্গিত অনেকটাই স্পষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কার্যত বলে দিয়েছেন, যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই তিনি মাস্ক পরবেন। এ-ও বলেছেন, স্কুল না-খুললে অনুদান বন্ধ করে দেবেন। হু-র অনুদান অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখিয়েছেন। নিজে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ গোপন করেননি। ব্রিটেনে বহু টালবাহানার পরে দোকান-বাজারে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে। কিন্তু লকডাউনে দেরি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বরিস জনসনের সরকার। ভারতে লকডাউন শেষ হওয়ার পরে হুহু করে রোগী বাড়ছে। বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এই পরিস্থিতিতে হু প্রধান বলেছেন, ‘‘সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোই করা না-হলে একটাই রাস্তা পড়ে থাকে। তা হল, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ, খারাপতর এবং অত্যন্ত খারাপের দিকে যাবে। সংক্রমণের লাগামছাড়া বৃদ্ধি রুখতে না-পারলে আগেকার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা অদূর ভবিষ্যতে অসম্ভব।’’ গতিবিধিতে কড়াকড়ির আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথাও মাথায় রেখেছেন হু প্রধান। তা সত্ত্বেও আক্ষেপ করেছেন যে, করোনাভাইরাস এখনকার পয়লা নম্বর শত্রু হওয়া সত্ত্বেও বহু দেশের সরকার ও মানুষের আচরণে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
গেব্রিয়েসাস বলেছেন, ‘‘মানুষের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকেই তাঁরা (কিছু রাষ্ট্রপ্রধান) অবহেলা করছেন। সেটা হল, বিশ্বাস।’’ তাঁর মতে, সরকারের উচিত কোভিড স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আরও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া। জনতারও তা মানা উচিত। গত কাল হু প্রধান যখন এই মন্তব্য করছেন, ঠিক তার আগের দিনেও নতুন সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে বিশ্বে। তার ৮০ শতাংশই ১০টি দেশে। ৫০ শতাংশের বেশি নতুন সংক্রমণ আমেরিকা ও ব্রাজিলে। রাখঢাক না-করেই ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন হু-র আপৎকালীন বিষয়ক প্রধান মাইক রায়ান। বলেছেন, ‘‘স্কুলগুলো যেন রাজনৈতিক ফুটবল খেলার মাঠ না-হয়ে ওঠে। সেটা আমাদের বাচ্চাদের প্রতি সুবিচার হবে না।’’ সূত্র: আনন্দবাজার