আমেরিকায় নিরস্ত্র জেকব ব্লেকের ওপর পুলিশের গুলির প্রতিবাদে কেনোশায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটল। অন্যদিকে ব্লেকের যা অবস্থা তাতে তিনি আর হাঁটতে পারবেন কি না সন্দেহ।
পুলিশের অত্যাচারে কয়েক মাস আগে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছিলেন ফ্লয়েড। আর পুলিশের সাতটি গুলি খাওয়ার পর জেকব ব্লেকের অবস্থাও ভালো নয়। ব্লেক পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত আর কখনো হাঁটতে পারবেন না।
এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গের ওপর আমেরিকার পুলিশের এই বর্ণবাদী হামলার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কেনোশা। বিক্ষোভ আমেরিকার অন্য শহরেও। তবে কেনোশার প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ থাকেনি। বেশ কিছু জায়গায় তা সহিংস হয়ে ওঠে। গোটা বারো সরকারি ভবনে আগুন ধরানো হয়। ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রচুর দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে।
গভর্নর টনি এভার্স জরুরি অবস্থা জারি করে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। এভার্স বলেছেন, ”আমরা কিছুতেই এই বর্ণবাদ ও অন্যায় বরদাস্ত করতে পারি না। কিন্তু একইসঙ্গে এই ধ্বংস ও ক্ষতির পথও সমর্থন করতে পারি না।”
ব্লেক যে ভালো নেই এবং তাঁর পক্ষাঘাত হয়েছে এই খবর জানার পর বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আরো বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, একটা গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে, অন্য গুলি পেটে লেগেছে। ফলে তাঁর লিভার, অন্ত্র ও পেটের অভ্যন্তরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর হাতেও গুলি লেগেছে। অ্যাটর্নি বেন ক্রাম্প বলেছেন, ব্লেক যদি আবার হাঁটতে পারেন, তা হলে তা অবিশ্বাস্য ঘটনা হবে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে, নিরস্ত্র ব্লেককে পুলিশ একাধিকবার গুলি করে। ব্লেক তখন গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে তখন তাঁর তিন ছেলে ছিল।
এই ঘটনার পরই প্রথমে কেনোশা, তারপর লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, মিনেপোলিসে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। কার্ফু অগ্রাহ্য করে লোকে রাস্তায় নামেন। কেনোশায় গত দুই দিন ধরে যেখানে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হচ্ছেন, সেখানে লোহার বেড়া লাগানো হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ চলবে। তাঁদের প্রথম দাবি, ওই দুই পুলিশকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। আর কালো মানুষদের ওপর অন্যায় বন্ধ করতে হবে।
অন্যদিকে মূলত শ্বেতাঙ্গদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ঠিক করেছে, তাঁরা সম্পত্তি রক্ষা করবে। এই গোষ্ঠীার নাম আর্মড সিটিজেনস টু প্রোটেক্ট লাইভস অ্যান্ড প্রপার্টি। তাঁরা জানিয়েছে, সরকারি ভবন রক্ষা করা হবে। ভাঙচুর করতে দেয়া হবে না। কোমরে হ্যান্ডগান এহং হাতে এআর ১৫ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে কেভিন ম্যাথুসন জানিয়েছেন, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে রক্ষা করবেন। কেউ কেউ বুঝতে পারেন না, সরকারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে তার ভিতরে কেউ থাকলে তিনিও মারা যাবেন। অন্য ক্ষতি তো হবেই।
ফলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। ফ্লয়েডের পর ব্লেক নিয়ে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আমেরিকা। সূত্র: ডয়েচে ভেলে