র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর ইজতেমা ঘিরে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। তারপরও অনলাইনে নজরদারি রাখা হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ইজতেমার দুই পক্ষ নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এজন্য মুরুব্বিদের সাথে কথা বলা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের নিয়ে গত বছর যে হেনস্থার ঘটনা ঘটেছিল, এবার নজর রাখা হচ্ছে এ বিষয়ে। প্রথম পক্ষ ও দ্বিতীয় পক্ষকে ইজতেমা ময়দান বুঝিয়ে দেয়ার সময় যদি কেউ, ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু বিনষ্ট করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেভাবে নজরদারি রাখবে।
বিশ্ব ইজতেমা র্যাব ফোর্সেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত তথ্যও সংবাদ সম্মলেন তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে জাতীয় পর্যায়ের ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব/অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে, সর্বসাধারণের প্রশংসা ও ভালবাসা অর্জন করেছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার মাঠসহ আশেপাশের এলাকাসমূহে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর ইজতেমা ঘিরে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। তারপরও অনলাইনে নজরদারি রাখা হয়েছে।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশিসহ সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে। এই বছর দুই ধাপে ০৩ দিন করে ইজতেমা মোট ০৬ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ০২ থেকে ০৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপে ০৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইজতেমা এলাকাসহ পাশের এলাকাসমূহে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদর দপ্তর, র্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ অন্যান্য ০৫টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়াও ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। ইজতেমা মাঠ ও তার পাশের এলাকা সমূহে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য র্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা উপলক্ষে র্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও টহলদেয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে র্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও র্যাব ইজতেমা স্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ পথে যেকোন বিশৃংখলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিকভাবে নৌ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন,যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধকল্পে দুই ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইজতেমা এলাকার আশে পাশে শৃঙ্খলা, মাদকাসক্ততা, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য কমাতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধকল্পে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ার এর সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চলছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ইজতেমা এলাকায় র্যাবের চিকিৎসা কেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও আগত মুসল্লিদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়; সেজন্য র্যাবের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্ম বিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আসন্ন ইজমেতাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোন ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে র্যাব ফোর্সেসসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ইজতেমায় আগত মুসল্লিসহ দেশের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি বলে জানান তিনি।