শরীয়তপুরের ডামুড্যাতে ফাতেমা মুন্নি (৩০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৫ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর এলাকায় এ ছুরিকাঘাত করা হয়।
আহত ফাতেমা মুন্নি ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তিলই এলাকার বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী। শরিফুল শেখ নামের অভিযুক্ত তার সাবেক স্বামী। শরিফুল গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার চর পদ্মবিল এলাকার তৈয়ব শেখের ছেলে।
ভূক্তভোগী নারী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের সাজনপুর এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেন ছৈয়ালের মেয়ে ফাতেমা মুন্নির সাথে অন্তত ৬ বছর আগে বিল্লাল হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৫ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গত ১ বছর আগে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমে পড়ে এই নারী শরিফুল শেখকে বিয়ে করেন । তবে কয়েক মাস সংসার করার পরে জানতে পারেন শরিফুলের আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। পরে শরিফুলকে ডিভোর্স দিয়ে প্রথম স্বামী বিল্লাল হোসেনের কাছে তিনি ফিরে আসেন।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই ক্ষিপ্ত হয় শরিফুল। তিনি ফাতেমা মুন্নিকে তার সংসারে ফিরে যাওয়ার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করে বিরক্ত করতে থাকে। ফাতেমা মুন্নিকে আর বিরক্ত করবে না মর্মে শেষ বারের মতো দেখা করার কথা বলে বুধবার সন্ধ্যায় ডামুড্যাতে আসেন শরিফুল। একপর্যায়ে তারা দেখা করেন এবং রিকশায় ফাতেমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। তারা রিকশা নিয়ে কুতুবপুর এলাকায় আসলে শরিফুল মুন্নির পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় মুন্নি নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে তাকে আরও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় শরিফুল। পথচারীরা গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্নিকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় পাঠান।
ভুক্তভোগী ফাতেমা মুন্নি বলেন, আমি শরিফুলকে ডিভোর্স দিয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিলাম। কিন্তু শরিফুল বার বার ফোন দিয়ে আমাকে বিরক্ত করতে থাকে। আজ শেষ বারের মতো দেখা করার কথা বলে আমার কাছে অনুরোধ করে। আমি বিশ্বাস করে ওর সাথে দেখা করি। রিকশায় একটি নির্জন পথে নিয়ে শরিফুল আমার পেটের মধ্যে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। আমি আর বাঁচবো না, আপনারা আমার সন্তানকে দেখে রাখবেন। আমি শরিফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী সাগর নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, আমি ওই রাস্তা দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি মেয়েটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ, প্রচণ্ড রক্ত পড়ছিলো। সে অনেকের কাছে নিজেকে বাঁচাতে অনুরোধ করছিলো। কিন্তু কেউ তখন এগিয়ে আসেনি। তখন আমি একটি টিশার্ট ছিড়ে আঘাতের স্থানে বেঁধে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
এ ব্যাপার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অমিত সেনগুপ্ত বলেন, ওই নারীটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিলো। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে পেটের নিচের অংশের আঘাতটি খুবই গুরুতর, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তার খাদ্যনালী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তাছাড়া নারীটি বলছিলেন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় তার দ্রুত অপারেশন প্রয়োজন। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, তার জীবন সংশয় হতে পারে।
জানতে চাইলে ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমারত হোসেন বলেন, একটি নারীকে কেউ আঘাত করেছে এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন একটি খবর পেয়েছি। এবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।