আনতারা রাইসা: মা মানে এক মায়ার নাম। যে মায়া আমাদের আজন্ম বেঁধে রাখে এক অদ্ভুত বাঁধনে। মা শব্দটা আমাদের শোনা সবচেয়ে মধুর ধ্বনি। তবু মাকে যেন আমরা তাদের সঠিক প্রাপ্য টা দেইনা। তারা সারাদিন আমাদের জন্য যত কিছুই করুক না কেন আমাদের মনে হয় মায়েদের তো এভাবেই কাজ করে যাওয়ার কথা। তবে মায়েদের এই অবিস্মরণীয় ত্যাগের কথা আজ আমাদের স্মরণ করতেই হয়। কারন আজ বিশ্ব মা দিবস।
আজ সকাল থেকেই অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী যার যার মাকে ভালোবাসা জানাচ্ছেন। মায়ের ছবি দিয়ে নিজের ভালোবাসা ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন।
কিন্তু দেশের অনেকেই হয়তো জানেন না যে, কীভাবে এলো এই বিশ্ব মা দিবস!
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আনা জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারা জীবন অনাথদের সেবায় জীবন ব্যয় করেছেন। ১৯০৫ সালে মারা যান মেরি। অনাথদের জন্য মেরির এই নিঃস্বার্থ উৎসর্গিত জীবনের কথা অজানাই থেকে যায়। লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। তাই নতুন এক উদ্যোগ নেন তিনি।
অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। তার সাত বছরের চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় মা দিবস। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের দরুন আমরা অনেকেই বাড়িতে আটকা পড়েছি। এই সময়ে যাঁরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছেন, তাঁরা যথেষ্ট ভাগ্যবান। মায়ের হাতের মজার মজার খাবার ও ভালোবাসা-যত্ন পাচ্ছেন তাঁরা। আবার অনেকেই এই সময়ে মায়ের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলছেন, রান্নার বিভিন্ন রেসিপির জন্য মাকে প্রশ্ন করছেন। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপিত হয়। তবে এ বছর মায়ের জন্য কার্ড, কেক কিংবা ফুল কিনতে যাওয়া আপনার জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে চলমান লকডাউনের কারণে। তাই এবার মাকে ভিন্নধারার কিছু উপহার দেওয়া বা চমকে দেওয়ার চিন্তা করতে হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু উপায়—
আবৃত্তি করুন মায়ের প্রিয় কবিতা, চিঠি লিখুন
মায়ের প্রশংসা করে তাঁকে হৃদয়স্পর্শী চিঠি লিখুন। অথবা তিনি যদি কবিতা ভালোবাসেন, তাঁর জন্য কবিতা লিখুন। লেখা সম্ভব না হলে তাঁর প্রিয় কোনো কবিতা আবৃত্তি করুন। যাঁরা ঘরে আছেন কিংবা বাইরে আছেন, সবাই এই কাজটি করতে পারেন।
কেক তৈরি করুন
যাঁরা ঘরে আছেন ও পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন, এটি তাঁদের জন্য। প্রতিবছর অনেকেই বাইরে গিয়ে মায়ের জন্য কেক কিনে আনেন। এ বছর কিছুটা বাড়তি কষ্ট করুন এবং মায়ের জন্য একটি কেক বানিয়ে ফেলুন। সন্ধ্যায় মায়ের চায়ের সঙ্গে নাশতার দারুণ উপকরণ হতে পারে কেক। কেক বানানোর অনেক রেসিপি আপনি ইন্টারনেটে পাবেন।
মাকে সাহায্য করুন
বাড়িতে সারা দিন মা কত কাজই তো করেন। বছরের এই বিশেষ দিনে তাঁকে বিশ্রাম দিন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ির কাজগুলো করে ফেলুন। মাকে আরাম করতে দিন, এর চেয়ে ভালো উপহার আর হতে পারে না।
সহনশীল হোন
ঘরে থাকার এই সময়টিতে অনেকেই পরিবারের প্রতি মেজাজ হারান এবং বাজে আচরণ করেন। এই সময়টিকে আশীর্বাদ হিসেবে নিন এবং পরিবারের প্রতি নেতিবাচক আচরণে পরিবর্তন আনুন। বাবা-মায়ের প্রতি যত্নশীল হোন, তাঁদের কথা শুনুন, তাঁদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করুন। তাঁরা কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে তাঁদের শান্তভাবে, প্রয়োজনে বারবার বুঝিয়ে বলুন।
এ বছর আপনার উপহার হয়তো পারফেক্ট হবে না, কিন্তু মা ও পরিবারের অন্য সব সদস্যের সঙ্গে ভালো আচরণ নিঃসন্দেহে আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। আপনি ভালোভাবেই জানেন, এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু আপনার মায়ের প্রাপ্য। কিন্তু ভালো কিছু করার শুরুটাই সম্ভাবনার অনেকগুলো দ্বার খুলে দেয়।
তথ্যসুত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস