তিনি জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন তাঁর শিল্পকর্মে। তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলার আগ্রগণ্য শিল্পী এস এম সুলতান।
এস এম সুলতানের জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক-পরিবারে। সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো।
সেই অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়নের সুজগ হয়নি সুলতানের। মাত্র ১০ বছর বয়সে, একটি পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।
১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন সুলতান। ১৯৪৩ সালে, তৃতীয় বর্ষে উঠে সুলতান আর্ট স্কুল ছেড়ে দেন।
সুলতান বের হন দেশভ্রমণে। তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে।
এস এম সুলতানের ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর লন্ডনেও তিনি প্রদর্শনী করেছিলেন। ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে তিনি আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।
১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এর পাশাপাশি রেখাচিত্র আঁকতেন । আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং জটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এস এম সুলতান। আজ মহান এই শিল্পীর ৯৭ তম জন্মদিন।