মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। শরীরের ভিতর রক্তের মধ্যে জমে থাকা আবর্জনা পরিশোধিত করে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করাই কিডনির কাজ। আর এই কাজ কিডনি ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব নয়। মানবদেহে মোট দুটি কিডনি থাকে, আকৃতিতে অনেকটা শিমের বিচির মতো।
প্রতিটি কিডনিতে আট থেকে ১২ লাখ ছাঁকনি থাকে। এই ছাঁকনিগুলো এতই সূক্ষ্ম যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। কিডনির রক্তবাহী নল যেখানে শেষ হয়েছে, ঠিক সেখানেই রয়েছে ছাঁকনিগুলো।
বর্তমানে গোটা বিশ্বে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে । এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত । ডায়াবেটিসের তুলনায় যা দ্বিগুণ এবং ক্যানসারের তুলনায় যা প্রায় ২০ গুণ বেশি । গবেষণার তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় । যার মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ আকস্মিক কিডনি রোগে মারা যায়।
এদিকে, প্রায় ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগ সম্পর্কে কিছুই জানে না। সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা ৫০ ভাগেরও বেশি নষ্ট হওয়ার আগে কিডনি বিকলের লক্ষণ বোঝা যায় না । শরীরের অন্যান্য অঙ্গ খারাপ হলে তার লক্ষণ বুঝা যায়। কিন্তু কিডনির সমস্যা হলে আপাতদৃষ্টিতে কিছুই বোঝা যায় না ।
তাই কিডনিকে সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট হলেও ব্যায়াম করুন। এছাড়া হাঁটা, দৌড়ানো এমনকি সাইকেল চালানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এগুলো আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট ভালো রাখে এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়।
১২০/৮০ হলো শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ। তবে এটি ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে তা কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও কাঁচা লবণ কম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তে সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করাতে হবে। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই ধূমপান থেকে শুরু করে সবধরনের মাদকের অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
ছোট্ট একটি প্রবাদ আছে, মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না। কিডনির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রায় একই। দেখতে খুবই ছোট, কিন্তু তার কাজ শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময় থাকতেই কিডনির যত্ন নেয়া প্রয়োজন। দূষিত বা রেচন পদার্থ যদি শরীর থেকে বেরিয়ে না যায়, তা হলে তা জমতে থাকে অভ্যন্তরেই। তাই শরীরকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য কিডনি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা গুরুত্ব রয়েছে অন্যান্য অঙ্গগুলোর।