যান্ত্রিক এ শহরে গাড়ি-কলকারখানার সংখ্যা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে বাড়ছে বাতাসে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণও। তবে এ বিষাক্ত রাসায়নিক যে শুধু রাস্তাঘাটেই রয়েছে, তা কিন্তু নয়। এমন অনেক ভয়াবহ রাসায়নিক পদার্থ আমাদের বাড়িতেও রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজেই আপনি ঘরবাড়ির বাতাসকে বিশুদ্ধ করে তুলতে পারেন। এজন্য আপনাকে বাসগৃহে নির্দিষ্ট কিছু গাছ রাখতে হবে। প্রাকৃতিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ এসব গাছ বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে ঘরে বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। উদ্ভিদ ছাড়া ঘরের সাজসজ্জাতেও যেন পরিপূর্ণতা আসে না। আজ এমনই কিছু উদ্ভিদ সম্পর্কে আপনাদের জানাব।
স্নেক প্লান্ট
‘গার্ডেন মাম’ বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি অল্প খরচেই ঘরের টবে লাগানো যায়।
পিস লিলি
চমৎকার একটি বায়ু পরিশোধক গাছ। অল্প আলোতেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। এর হলুদ পাতা বুঝিয়ে দেবে সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। এতে গ্রীষ্মে ফুটবে খুব চমৎকার সাদা ফুল। তবে বিড়াল, কুকুর আর বাচ্চাদের কাছে থেকে দুরে রাখুন এ গাছ। কারণ গলায় বা পেটে গেলে চুলকাবে।
স্পাইডার প্লান্ট
এটি কার্বন মনোক্সইড, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, চামড়ায় ও রাবার থেকে নির্গত দূষণ শোষণ করে। গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে এরপর পানি দিন। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দুরে রাখুন।
বাঁশ পাম গাছ
বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড পরিশোধন করার সবচেয়ে কার্যকরী গাছ হচ্ছে বাঁশ পাম গাছ। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা এই গাছ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাঁশ পাম গাছ বাতাস থেকে বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে। এটি দেখতে ছোট নারিকেল গাছের মত। আসবাপত্রের পাশে ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিন। আসবাপত্র থেকে নির্গত দূষণ শুষে নিবে। খুব বেশি পানি দিলে শিকড় পঁচে যেতে পারে। এছাড়াও পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্লান্ট
যে কোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে। আলো ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে, তেমন কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। আপনার ঘরের যেকোনো কোনায় এই লতানো গাছটি দূষণ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখবে। এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে।
অ্যালোভেরা
একটি দুর্দান্ত বাতাস বিশুদ্ধকারী প্ল্যান্টস। রান্না ঘরের পাশে ছোট বারান্দায় যেখানে রোদ আসে সেখানের জন্য একটি বাড়তি সংযোজন হতে পারে। কিচেনে রান্না করার জন্য উচ্চতাপমাত্রা থাকে। এই তাপমাত্রা কমানোর জন্য অ্যালোভেরা প্ল্যান্টস ৯০% ফর্মালডিহাইড ও বেনজিন দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। এছাড়াও বাতাসের বিষাক্ত ধূলিকণাগুলো নির্মূল করে বাতাসের গুনগত মান নিশ্চিত করে।
উইপিং ফিগ
এটি ওয়েপিং ফিগার বা ফিকাস ট্রি নামেও পরিচিত। নাসার স্টাডি অনুসারে, এই বাড়ির প্ল্যান্ট ইনডোর-এয়ার টক্সিন ফর্মালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে দক্ষতার সাথে সক্ষম।
রাবার প্ল্যান্ট
ফিকাস ইলাস্টিক (সবচেয়ে বেশি রাবার প্ল্যান্ট, রাবার ট্রি বা রাবার ট্রি গাছ হিসাবে পরিচিত) এটি একটি জনপ্রিয় হাউজপ্ল্যান্ট কারণ এর মোমের প্রলেপযুক্ত পাতার জন্যে। গৃহপালিত হাউজপ্ল্যান্ট হিসাবে রাবার গাছ ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা পর্যন্ত যে কোনও জায়গায় বৃদ্ধি পায়। রাবার প্ল্যান্ট তাদের অপ্রতিরোধ্য উচ্চতা এবং সুন্দর পাতার জন্য পরিচিত।