তুর্কি উপকূল থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে ভূ-মধ্যসাগরের পূর্ব দিকে গ্রীক দ্বীপ ইকারিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম মানুষের বাস এই দ্বীপে। মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এই দ্বীপের সবাই শতবর্ষী!
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫-১০০ বছরের ইকারিয়ান পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই যৌন ক্রিয়াকলাপে সক্ষম। হতাশা, স্মৃতিভ্রষ্টতার, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের হারও অনেক কম। শতবর্ষী হয়েও এরা যৌনজীবন উপভোগ করেন। ১০০ বছর বয়সী জিরেজিরিস তাসাহাস ৭০ বছর ধরে দৈনিক এক প্যাকেট সিগারেট খান। অ্যাপেডিসাইটিসের সমস্যা বাদে বিগত ১০০ বছরে কঠিন কোন রোগে আক্রান্ত হননি তিনি। তার মত আরও অনেকে রয়েছে ইকারিয়া দ্বীপে।
গ্রীসে অনেক পর্বতমালা রয়েছে। তবে সেগুলোর সঙ্গে ইকারিয়া দ্বীপপুঞ্জের ব্যবধান অনেক। কারণ সেখানকার মানুষেরা অন্যান্য দ্বীপপুঞ্জ এবং মূলভূমির জনসংখ্যার তুলনায় ১০ বছর বেশি বাঁচেন। অসম্ভব সুন্দর দ্বীপ ইকারিয়া একটি পাহাড়ি এলাকা। সেখানে খাড়া উপত্যকায় গড়ে উঠেছে জনবসতি। পাহাড়ি এই এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময় পর্যটকরা ভিড় জমান। সেখানকার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। সমুদ্রের পাশে খাড়া উপত্যকায় ছড়ানো ছিটানো বাড়ি-ঘর ও পাহাড়ি পরিবেশ দেখতে গিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে পান অনেক পর্যটকই।
এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ ক্রিস্টিনা ক্রিশোহউয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে ইকারিয়ানদের দীর্ঘজীবন লাভের রহস্য। ইকারিয়ানদের ডায়েটে শাক-সবজি ও মটরশুটির পরিমাণ বেশি অন্যদিকে তারা খুব বেশি মাংস বা পরিশোধিত চিনিজাতীয় খাবার খান না। তারা রেড ওয়াইন (অল্প পরিমাণে), আলু ও ছাগলের দুধ নিয়মিত খেয়ে থাকেন।
তিনি আরও মনে করেন, ইকারিয়ানরা প্রচুর পরিমাণে ভেষজ চা এবং কম পরিমাণে কফি পান করেন। যা তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। তারা প্রতিদিন খুবই কম ক্যালোরির খাবার খায়। একেবারেই পশ্চিমা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত নন তারা। ইকারিয়ানরা প্রতিদিন বিকেলে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে। নিয়মিত ন্যাপ নিলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, ইকারিয়ানরা শারীরক অনেক কসরত করেন। নারী-পুরুষ সবাই নিজেদের জমি নিজেরাই চাষাবাদ করেন। পাশাপাশি পশু লাল-পালনসহ নিয়মিত পাহাড়ে চড়া সব কাজেই তারা পারদর্শী। ১০০ বছর বয়সেও তারা ১০০ সিঁড়ি মুহূর্তেই পাড়ি দিতে পারেন।