ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে চেলসির উইলিয়ান গোলটা করার সঙ্গে সঙ্গে তিরিশ বছর আগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি তখন ইংল্যান্ডের ক্লাব কোলচেস্টার ইউনাইটেডে খেলছি। এখনও মনে আছে, দিনটা ছিল ২৮ এপ্রিল ১৯৯০। অ্যানফিল্ডে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লিভারপুল। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে গোল শোধ করে ইয়ান রাশ। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে জন বার্নস ২-১ করতেই লিগ খেতাব নিশ্চিত হয়ে যায় লিভারপুলের। সম্ভবত আরও কয়েকটা ম্যাচ বাকি ছিল।
লন্ডনে লিভারপুলের সমর্থকের সংখ্যা এমনিতেই খুব বেশি নয়। তার উপরে আর্সেনাল, চেলসি, ওয়েস্ট হ্যাম সমর্থকদের দাপটে ওঁরা একটু গুটিয়ে থাকেন। কিন্তু সে দিন একেবারে অন্য ছবি দেখেছিলাম। লিভারপুলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় অনেক রাত পর্যন্ত উৎসব করেছিলেন ভক্তরা। লিভারপুলের ভক্ত না হওয়া সত্ত্বেও আমি যোগ দিয়েছিলাম ওঁদের সঙ্গে। কারণ, বছরখানেক আগে ভয়াবহ হিলসবরো বিপর্যয়ের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিল এই জয়।
ক্লপকে দেখলে কখনওই ফুটবল ম্যানেজার বলে মনে হয় না। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বলে অনেকেই ভুল করবেন। ওঁর মানসিকতাও অন্য রকম। সব সময় নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টায় মগ্ন। ক্লপের কোচিংয়ের ধরনও আলাদা। একটা সময়ে ইংল্যান্ডের ফুটবল ঘরানা ছিল, নিজেদের মধ্যে কম পাস খেলে দ্রুত আক্রমণে উঠে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে স্ট্রাইকারদের উদ্দেশে বল ভাসিয়ে দেওয়া। আর্সেন ওয়েঙ্গার, আলেক্স ফার্গুসনের মতো ম্যানেজারের হাত ধরে ইংল্যান্ড ফুটবলের বিবর্তন হয়েছে। এখন বিশ্ব ফুটবলের দুই সেরা কোচ রয়েছে ইপিএলে। পেপ গুয়ার্দিওলা এবং য়ুর্গেন ক্লপ। ওঁদের ছোঁয়ায় ইপিএলে ফুটবল সৌন্দর্যময় হয়ে উঠেছে।
মহম্মদ সালাহদের খেলা যাঁরা নিয়মিত দেখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন ৪-৩-৩ ছকে দল সাজালেও প্রতি ম্যাচেই খেলার ধরন বদলে ফেলছে লিভারপুল। শুধু তাই নয়, ম্যাচের মধ্যে বার বার রণনীতি বদলেও ক্লপ সমস্যায় ফেলে দিচ্ছেন বিপক্ষের কোচকে। এটা তখনই সম্ভব, যখন সেই দলের ফুটবলারদের সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। রক্ষণের ভার্জিল ফান ডাইক থেকে ফরোয়ার্ড রবের্তো ফির্মিনো— প্রত্যেকের এই দক্ষতা তৈরি হয়েছে ক্লপের অধীনে। ধীরে ধীরে নিজের মনের মতো করে দলটা সাজিয়ে নিতে পেরেছেন ক্লপ। লিভারপুলের তাই সাফল্য আসতে দেরি হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পরে এ বার তিন দশকের খরা কাটিয়ে লিগ জয়ের স্বপ্নও সফল করল। এ নিয়ে লিভারপুল লিগ জিতল ১৯ বার। সামনে শুধু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, যারা জিতেছে ২০বার।
শুক্রবারই দেখছি আমার ইপিএল বন্ধুদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে, স্যর আলেক্স ফার্গুসনের সেই স্বপ্নের দৌড় কি ধরতে পারবে ক্লপের লিভারপুল? সময়ই বলে দেবে। সূত্র: আনন্দবাজার