কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বণ্টন, বিতরণে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এখন থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাওর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল, জলা এলাকা, লবণাক্ত অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু ফসল উদ্ভাবন ও ফলনেও তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য-সংকটের কোনও আশঙ্কা করেননি জেলা প্রশাসকরা। এবার সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন বলে কৃষকদের ন্যায্য দাম নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।’
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ের সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করেন। করোনার অভিঘাতের সময় ধান কাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন জেলা প্রশাসকরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলের শ্রমিকদের ব্যাপক সমস্যা ছিল। তখন জেলা প্রশাসকেরা সহযোগিতা করেছেন। উৎপাদন থেকে বিতরণ সব কার্যক্রমে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা আছে। ভবিষ্যতে তারা যাতে আরও বেশি সহায়তা করেন, আমরা সেটা বলেছি।’
খাদ্য নিরাপত্তা যেকোনও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একসময় কৃষির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুব একটা সামাজিক মর্যাদা ছিল না। কৃষি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আধুনিক কৃষি, সেটি কেউ মনে করতো না। সবাই এটিকে হেলায়ফেলায় দেখতো। কিন্তু এখন আর তা নেই। আগে এক বিঘাতে চার-পাঁচ মণ ধান হতো, এখন এক বিঘা জমিতে ধান হয় ২০ মণ।’
‘আমাদের বিজ্ঞানীরা ধানের নতুন জাত নিয়ে এসেছেন, যা থেকে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৩ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব। এ কারণে এখন সবাই কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা সরিষার আবাদ বাড়াতে বলেছি। আমরা ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করি ভোজ্যতেল আমদানিতে। এটিকে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশের যে জাত, তাতে এক বিঘায় এক থেকে দেড় মণ সরিষা উৎপাদন হয়। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত জাতের কারণে সেটি দিয়ে বিঘাপ্রতি সাত-আট মণ সরিষা উৎপাদন সম্ভব। আমরা বলছি, উৎপাদন থেকে বাজারজাত করণে জেলা প্রশাসকরা যাতে ভূমিকা রাখেন,’ যোগ করেন কৃষিমন্ত্রী।
পতিত জমি ব্যবহার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট এলাকায় অনেক অব্যবহৃত জমি আছে। বরিশালের জমিতে লবণাক্ততা ও পানির সমস্যা আছে। সেখানে ৬০ ভাগ জমি আবাদ হয় না। এসব জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসার কথা আলোচনা হয়েছে। হাওরাঞ্চলে এমন জাত উদ্ভাবন করতে হবে; যাতে আগাম বন্যা আসার আগেই ধান কেটে ফেলা যায়।’
হাওরাঞ্চলে আরও গবেষণা জোরদার করতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আব্দু রাজ্জাক বলেন, ‘ওই অঞ্চলে এমন জাত উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে আগাম বন্যা আসার আগেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়। বরিশালসহ লবণাক্ত এলাকায় এমন ধানের জাত দরকার, যা লবণাক্তসহিষ্ণু হয়। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এতে বৈশ্বিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ১৭ কোটি মানুষের কোনও খাদ্য সরবরাহ করতে পেরেছি। খাদ্য নিয়ে কোনও হাহাকার হয়নি। তাই আমরা কোনও আশঙ্কার মধ্যে নেই। জেলা প্রশাসকরাও বলেননি। আগামী দিনে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কৃষি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে।’