মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী বেঁচে থাকলে জামায়াত নেতা এ টি আজহারুল ইসলামের মতো কারামুক্তি পেতেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। মঙ্গলবার (২৭ মে) একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে জামায়াতে ইসলামীর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস পাওয়ার পর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানান।
সেখানে তিনি লেখেন, “মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহার আজকে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আওয়ামী দুঃশাসনের শিকার, মিথ্যা মামলায় জীবন হারানো এমন কিছু মানুষকে আজ মনে পড়ছে। হয়তো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমাদের মাঝে আজ এভাবেই ফিরে আসতে পারতেন! ফিরে আসতে পারতেন নাম না জানা গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হওয়া হাজারো আমাদের ভাই-বোন।” “কিন্তু সেই সুযোগ আর নেই। আমাদের যাদের সুযোগ হয়েছে এই মা, মাটি ও দেশের জন্য কিছু করার, তারা যেন সৌভাগ্যক্রমে পাওয়া এই সুযোগ এবং আমানতের খেয়ানত না করি।”
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি আপিল করেন। আপিলের শুনানি শেষে আজহারুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রায় প্রকাশের পর পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়।
এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ আপিল বিভাগ এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়েছেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রায়ের ফলে তার মুক্তিতে আর বাধা নেই।
এর রায়ের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, “নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পেয়েছেন।”
২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। এছাড়া, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ফাঁসি কার্যকর করা হয়।