আজ ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, গোলাম নবী সাটু, নবির উদ্দীনসহ নাম না জানা হাজারও শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হয় এই জেলা।
মার্চ মাসে যুদ্ধ শুরু হলেও প্রথমদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ১৯ এপ্রিল রাতে শহরে সেল বর্ষণ করে আতংক সৃষ্টি করে পাকবাহিনী। শহর দখল করে ব্যাপক ধ্বংষযজ্ঞ চালায় তারা। তারপরই পাক বাহিনীকে প্রতিহত করতে সংগঠিত হতে থাকে মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় প্রশিক্ষন নিতে ভারতেও পাড়ি জমান অনেকে। শেষের দিকে জেলার বেশ কিছু স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে আহত ও নিহত হন অনেকে।
১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চরবাগডাঙ্গা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হয় এবং পাক সেনাদের বাংকার দখল করে নেয়। ১০ ডিসেম্বর প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন। ১১ ডিসেম্বর সেখানে ভারতীয় বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবর্ষণ করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি হয়নি।
পরবর্তীতে ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর একাধিকবার ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই শত্রুদের অবস্থানে আক্রমণ করবেন এবং তিনি সেটিই করেন। ১৩ ডিসেম্বর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং ওই দিন মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে।
সেদিন রাতে হরিপুর ব্রিজের কাছে সংঘটিত যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর নায়েক নবির উদ্দীনসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। এতে ৯ জন সাধারণ গ্রামবাসীও নিহত হন। বাঙলা মায়ের দামাল সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর শিবগঞ্জকে মুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে ১৩ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর মুক্ত করতে কয়েকটি নৌকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রেহায়চর এলাকায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।
১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পার্শ্বে মহানন্দা নদীর তীরবর্তী গ্রাম রেহায়চর এলাকায় মুক্তিবাহিনী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হন। সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক পরাস্ত হতে থাকে শত্রু বাহিনীকে।
১৪ ডিসেম্বর রাতের আধার কেটে সকালে সূর্য ওঠার আগেই নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধারা বীরদর্পে এগিয়ে চলেন এবং ধ্বংস করে দেন শত্রু বাহিনীর ১৮টি ট্রেঞ্চ ও ২০ থেকে ২২ টি বাংকার। দুঃসাহসিক ও দুরন্ত আক্রমণে শত্রু বাহিনী তাদের আস্তানা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে রেহায়চর ঘাটের কাছেই শত্রু বাহিনীর সর্বশেষ বাংকারটি দখল করার সময় হটাৎ শত্রু বাহিনীর একটি গুলি এসে লাগে বীরশ্রেষ্ঠে জাহাঙ্গীরের কপালে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাংলার এই বীর সন্তান এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। তার মরদেহ সারাদিন ঘটনাস্থলেই পড়েছিল।
পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে শত্রুমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। উড়ানো হয় বিজয় পতাকা এবং মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এর মরদহে উদ্ধার করে তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রহঃ) এর পুণ্যভূমি বাংলার পুরাতন গৌড়ের রাজধানী ঐতিহাসিক সোনামসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয়।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভ