সরকারের সিদ্ধান্তে সর্বনিম্ন অর্থছাড়ের প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। বর্তমান সরকার চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন অর্থছাড় করেছে। যার প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে গত ৮ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অর্থছাড় হয়েছে। এর ফলে গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে সরকার বড় ধরনের কাটছাঁট করতে চায়, তারই প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। যদিও কাটছাঁটের প্রভাব পড়েনি বড় বরাদ্দ পাওয়া এলজিইডি ও সড়কে। বরাবরের মতোই উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত।
আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নাই। সেই আলোকে গত এক যুগে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে চার মাসে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছাড় হয়েছিল ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। শুধু গত অক্টোবর মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৮ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ছাড় হয়েছিল ১১ হাজার ৮২ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট হতে পারে। তাই বেশি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড় করা হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রাধিকার যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
আইএমইডি কর্মকর্তারা বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন বর্তমানে শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিয়ে এডিপি বড় ধরনের কাটছাঁট করলে তেমন কোনো অর্থের অপচয় হবে না। চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় ১ হাজার ৩২৬টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ২০২৩ সালে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যয় দেখা যায়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা অর্থ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর পর সর্বোচ্চ খরচ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সড়ক মহাসড়ক বিভাগ খরচ করেছে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খরচ করছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা খরচ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের কাজের গতি বাড়েনি। বড় মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ করেছে এই দুটি বিভাগ। চার মাসে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খরচ করেছে মাত্র ২ দশমিক ৪২ শতাংশ বা ২৬৯ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ খরচ করেছে মাত্র শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ বা ২ কোটি টাকা। এছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ খরচ করেছে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ খরচ করেছে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকল্পটি বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটির প্রয়োজনীয়তা কম তা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।