কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউপির রাইটা পাথরঘাটা এলাকার একটি পানের বরজ থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে একের পর এক পানের বরজ পুড়ে যায়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ বলছে, এ আগুনে সাড়ে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকার চার হাজার একর পানের বরজ, কলার বাগান,পাকা গমসহ আবাদি ফসল এবং ১০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। সঠিকভাবে নির্ণয় না করা গেলেও স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, আগুনে তাদের কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হাসান আলী নামে এক পান চাষি বলেন, বেলা ১১ টার দিকে আমরা মাঠের মধ্যে ধোঁয়া দেখতে পাই। তারপরেই আমরা ছুটে আসি। আমার মতো এলাকার সব বাড়ির নারী পুরুষ এবং শিশু আপ্রাণ চেষ্টার করেও শেষ রক্ষা হয়নি। আমার তিনটি পানের বরজ পুড়ে গেছে। এখন তো পথে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
চোখের সামনে সব ফসল নষ্ট হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন আজিবর মন্ডল। তিনি বলেন, কয়েকদিন পর থেকে এ পান বিক্রি করার কথা। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো। চোখের সামনে সব কিছু ঘটলেও কিছুই করতে পারলাম না।
খবর পেয়ে প্রথমে ভেড়ামারা এবং কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। পরে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এবং পাবনা থেকে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের আরো ১২টি ইউনিট। ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে কাজ করছেন তারা।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, এলাকাটি চরাঞ্চল হলেও পানির সংকট ছিলো। যেসব পুকুর ছিলো তাতে পানি নেই। আবার আগুনের স্থানে গাড়ি নেয়া যাচ্ছিল না। সঙ্গে ছিলো বাতাস। তারপরেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য।
ফায়ার সার্ভিসের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের উপ-পরিচালক রফিকুজ্জান জানান, বেলা ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। তারপরেই তারা বেলা ১২ টার দিকে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
তিনি আরো জানান, বাহাদুরপুর ইউপির রাইটা পাথরঘাটা এলাকার একটি পান বরজে আগুনের সূত্রপাত। দেখতে দেখতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক বরজ থেকে আরেক বরজে। এ সময় বাতাসের তীব্রতা থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চোখের সামনে পুড়তে থাকে বাড়ি-ঘর, ফসলি ক্ষেত, শত শত বিঘা পানের বরজ। এলাকার শত শত নারী পুরুষ আগুন নেভাতে কাজ করেন। আশপাশের জেলা থেকে ১২ টি ইউনিট ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে স্থানীয় বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ দিকে ঘটনার পর কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ৪ হাজার একর শুধুমাত্র পানের বরজ পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর কাজে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশের ২৫০ জন সদস্য কাজ করেছেন।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব বলেন, আসলে কী কারণে আগুন লাগলো, এটা কোনো অঘটন, নাকি নাশকতামূলক সব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বিয়ষটি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।