এদের মধ্যে কেউ কৃষি খামার করেছেন আবার কেউ বা শুধু গরুর খামার।
আবার রয়েছে বুটিক বা ফ্যাশন হাউজ কিংবা জুতোর কারখানা। কেউবা দেশী ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবসা।
বাংলাদেশে নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা আনুমানিক কত তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না।
তবে দেশের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশের প্রায় ২৭ লাখ বেকার আছে এবং এ বেকারদের মধ্যে ৩৯ ভাগই মোটামুটি শিক্ষিত বেকার।
এসব বেকারদের মধ্যে একদল উদ্যমী যেমন নিজেরা কিছু করার চেষ্টা থেকে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তেমনি আবার তরুণদের অনেকে নিজের অন্য ব্যবসার পাশাপাশিও নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন, বিনিয়োগ করেছে অর্থ।
দুশো গরু নিয়ে গড়ে তোলা খামার বন্ধের উপক্রম
মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান মোর্শেদ, যিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
কিন্তু নিজের আগ্রহ থেকে রীতিমত প্রশিক্ষণ নিয়ে গরুর খামার দিয়েছিলেন তিনি সাভারের হেমায়েতপুরে।
এই জানুয়ারিতেই তার খামারে দুশো গরু ছিলো কিন্তু এখন গরু আছে অল্প কয়েকটি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, “এখন প্রায় বন্ধ আমার এই খামার, কারণ দেখার লোক পর্যন্ত নেই। অল্প দামে ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক গরু।
যেসব চাষীদের ওপর বিনিয়োগ করেছিলাম অর্থাৎ যাদের গরু কিনে দিয়েছিলাম তারাও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে”।
সারওয়ার জাহান মোর্শেদ জানান তার পরিকল্পনা ছিলো খামার থেকে ঢাকার কসাইদের কাছে নিয়মিত ভালো গরু সাপ্লাই দেয়া।
এজন্য যেসব এলাকায় ভালো জাতের গরু পাওয়া যায় সেখানকার চাষীদের অল্প দামে গরু কিনে দিয়ে তাদের মাধ্যমে লালন পালনের পর সেই গরু নিয়ে আসতেন ঢাকার খামারে।
“আমি নিজে একটি অ্যাপও করেছিলাম। সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ ছিলো আমার। কিন্তু এখন সব বন্ধ।”
প্রায় থেমে গেছে চৈতির দেশী খাবারের কাজ
যশোর কুষ্টিয়ার মেয়ে আফরোজা চৈতি। অন্য কাজ করতে করতেই মাথায় এসেছিলো দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো নিয়ে কিছু করা যায় কিনা।
সে চিন্তা থেকেই শুরু করেছিলেন গুড় আর স্বর্ণচিনির ব্যবসা।
“আমাদের এলাকায় খেজুর রসের গুড় থেকে চিনি তৈরি হতো। আমি এর নাম দিয়েছি স্বর্ণচিনি।
এগুলোর জন্য বিশেষ কারিগর দরকার হয়। সবাই এটি তৈরি করতে পারেনা। আমি কিছু চাষীর মাধ্যমে এটি করা শুরু করেছিলাম”।
যশোরে একটি ছোটোখাটো খামার দিয়েছেন যাতে কিছু নারী শ্রমিক কাজ করেন।
গুড় বা স্বর্ণচিনির বাইরে ঘি, সরিষার তেল, ঢেকিছাঁটা চাল, গমের লাল আটার মতো ৪১টি আইটেম গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করেন তিনি।
“চাষীদের অল্প কিছু অগ্রিম দিয়ে শুরু করেছিলাম। ভালোই হচ্ছিলো। কিন্তু করোনা ভাইরাস এসে কাজের গতি থমকে দিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
আফরোজা চৈতি বলেন নিরাপদ খাবার সবার কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করেছিলাম এবং কাজের ভিত্তি ছিলো গ্রামের মহিলারা।
“কিন্তু অনেক বড় ক্ষতিই হয়ে গেলো করোনা ভাইরাসের কারণে,” বলেন তিনি।
দোকান ভাড়া আর স্টাফ খরচ যোগাতে বিপাকে আব্দুল কাদের
প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকার মিরপুর এলাকায় রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেশ জমে উঠেছিলো তার রেস্তোরাঁ এবং নিজেও স্বপ্ন দেখছিলেন বড় কিছুর।
বিবিসিকে তিনি জানান যে বিশ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। দোকান ভাড়া, স্টাফ খরচ সহ আনুষঙ্গিক সব ব্যয় মিটিয়ে মাসে প্রায় লাখ টাকার মতো থাকতো।
অথচ এখন রেস্তোরাঁটি প্রায় বন্ধ।
“ভাড়া আর স্টাফ বেতনই মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা দিতে হয়। গত তিন মাসে গড়ে এক লাখ করে লোকসান হচ্ছে। পার্সেল চালু রেখেছি শুধু ভাড়া আর স্টাফ খরচ উঠানোর জন্য,” বলছিলেন তিনি।
তিনি জানান মার্চ থেকেই কার্যত সব বন্ধ এবং এরপর অ্যাপ সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল চালু রাখার চেষ্টা করেছেন।
“খরচ কমাতে স্টাফ কমিয়েছি। স্টাফদের থাকার জন্য আলাদা যে জায়গা নিয়েছিলাম সেটা ছেড়ে দিয়েছি।
নিজস্ব একজন ডেলিভারিম্যান দিয়ে পার্সেল চালু রাখার চেষ্টা করবো কারণ অ্যাপগুলোর মাধ্যমে দিলে কমিশন বাবদ অনেক টাকা চলে যায়”।
স্বল্পমূল্যে ভালো জুতোর স্বপ্ন ভঙ্গ তুহিনের
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসার সাথে আগেই জড়িত ছিলেন ইজাবুল হক তুহিন।
সেখান থেকেই মাথায় এসেছিলো তুলনামূলক কম দামে ভালো জুতা নিজের কারখানায় বানিয়ে নিজের শোরুমে বিক্রি করা যায় কিনা।
সে চিন্তা থেকেই বছর দেড়েক আগে জুতোর কারখানা খুলেন তিনি।
“৪০/৫০ লাখ টাকার পণ্য পড়ে আছে কিন্তু বিক্রি নাই। অথচ মাসে গড়ে প্রায় ৮/১০ লাখ টাকার বিক্রি করতাম করোনা আসার আগে, ” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস্টার হক।
তিনি বলেন, “কিছু একটা করার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু তা আর হলোনা। মাসে শ্রমিকের বেতনই আড়াই লাখ টাকা।
অথচ পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে কেউ জানেনা। তাই সব বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করছি এখন”।
তবে শুধু এসব নতুন উদ্যোক্তারাই নন, মূলত করোনা ভাইরাসের জের ধরে সাধারণ ছুটি কিংবা লক ডাউন ছাড়া বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি না থাকা, দোকান পাট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে নতুন পুরনো সব উদ্যোক্তারাই সংকটে পড়েছেন।
শুধু মাছ চাষ এবং সবজির খামার যারা করেছিলেন তারা একটু ভালো দাম পাচ্ছেন কারণ খোলা বাজারের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে এসবের বিক্রি বেড়েছে কিছুটা।
তবে উৎসবকেন্দ্রীক পোশাক উদ্যোক্তারাও অনেকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন গত পহেলা বৈশাখ ও ঈদে ব্যবসা না হওয়ার কারণে।
সামনের ঈদেও কতটা ব্যবসা হবে তা নিয়ে নিশ্চয়তা না থাকায় নতুন করে কাজ হাতে নেননি বহু উদ্যোক্তা।
উইমেন এন্টারপ্রেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জানিয়েছে তাদের কয়েক লাখ নারী উদ্যোক্তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা