আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি শামসুর রাহমান। কবি সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে ছিলেন সোচ্চার। কলম চালিয়ে গেছেন নিরন্তর। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নময় আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন সব আন্দোলন সংগ্রামের প্রথমসারিতে।
কবি শামসুর রাহমান ছিলেন কবিতার বরপুত্র। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশের পরপরই তিনি সচেতন পাঠকমহলের আলোচিত হয়ে ওঠেন। এরপরের গ্রন্থগুলোও দারুণভাবে হয় পাঠক সমাদৃত।
কবি শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান যেন কবিতার ক্যানভাসে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শামসুর রাহমান সপরিবারে তাদের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে চলে যান। এপ্রিলের প্রথম দিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বেদনামথিত হয়ে তিনি লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’সহ বেশকিছু কবিতা।
কবির ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি যেন সন্তের মন্ত্রোচ্চারণের মতো অনিবার্য, আবহমান বাংলার সাধারণ জীবনের মতো স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিময়। শামসুর রাহমানের ষাটের বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়ও শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
সাংবাদিক হিসেবে কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমান আদমজি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্ম নেয়া এই কবিকে তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে, মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্টের আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বাংলা কবিতার এই বরপুত্র। বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি