দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা, আর্থিক টানাপোড়েন এবং জীবন সংগ্রামের নানা ঝামেলা সামলে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া বেশ কঠিন কাজই বটে। তার সঙ্গে বেড়ে চলা মানসিক চাপ এবং অবসাদ আপনার দাম্পত্য জীবনকে করে তুলতে পারে কলুষিত। মানসিক চাপের কারণে দাম্পত্য সম্পর্কে সৃষ্ট টানাপোড়েনের লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো-
ব্যক্তিগত সময় না থাকা: মাঝে মধ্যে আপনার দৈনিক রুটিন খুব ব্যস্ততাপূর্ণ থাকার ফলে নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখতে ভুলে যান। কিন্তু যদি খেয়াল করেন যে, এটি আপনার প্রতিদিনের বিষয় হয়ে উঠেছে এবং আপনি নিজের জন্য কোনো সময়ই বের করতে পারেন না, তাহলে তা মানসিক চাপে থাকার একটি স্পষ্ট লক্ষণ। মানসিক স্বাস্থ্য গবেষক অ্যানিসা স্নেবার্গার এ বিষয়ে বলেন, ‘সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ঠেকাতে আপনার কাজের ব্যস্ততা যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন।’ সপ্তাহে অন্তত একটা দিন আপনার ব্যক্তিগত কাজের জন্য রাখুন। কোনোভাবেই আপনার সঙ্গীকে তার প্রাপ্য সময়টুকু থেকে বঞ্চিত করবেন না। কাজের ফাঁকে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান, গল্প করুন। তার মানসিক চাহিদা পূরণ করার দায়িত্ব একমাত্র আপনারই। আপনার ব্যক্তিগত সময়হীনতার কারণে আপনিসহ আপনার সঙ্গীর জীবনেও মানসিক অবসাদ নেমে আসতে পারে। সেবিষয়ে সচেতন থাকুন।
পর্যাপ্ত যৌন সহবাসের অনুপস্থিতি: অনেকসময় দেখা যায় অতিরিক্ত কাজের চাপে আপনি আপনার সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননা। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে আপনার একমাত্র উপভোগ্য বিষয় হয়ে ওঠে ঘুম। অথচ দাম্পত্য জীবনের শুরুতে আপনি এবং আপনার সঙ্গীর যৌনজীবন এমন ছিল না। অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা এবং মানসিক চাপের কারণে আপনার দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠেছে কলুষিত। আপনার আনন্দঘন দাম্পত্য জীবন শুধুমাত্র বিবাহপরবর্তী স্মৃতিগুলোর মাঝে আটকে যেতে দেবেন না।
কথোপকথনে নির্লিপ্ততা: অনেক সময় দেখা যায় কাজের চাপের কারণে আপনি প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে সঙ্গীর প্রতি উদাসীন হয়ে যাওয়া অন্যতম প্রধান একটি দাম্পত্য সমস্যা। আপনার সঙ্গী আপনার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে বা কোনো পরামর্শ নিতে চাইলে তাকে এড়িয়ে যাবেন না। কেননা আপনার কর্মব্যস্ততা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আপনার দাম্পত্য জীবনে শান্তিও অত্যন্ত জরুরি। কাজের ব্যস্ততা যতই থাক, সঙ্গীর সঙ্গে কথাবার্তা বা ভাবের আদান-প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সময় হাতে রেখে দিন।
পরিবারের অন্যদের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া: কাজের ব্যস্ততা এবং সেই সঙ্গে মানসিক চাপের কারণে হয়তো আপনি আপনার পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে আপনার সঙ্গী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আপনার অনুপস্থিত থাকাতেই বেশি অভ্যস্ত হয়ে যায়। এতে করে দেখা যায় তারা নিজেদের মধ্যে ভিন্ন এক জগৎ তৈরি করে ফেলে যেখানে আপনি নেই এবং আপনি যখন আপনার সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, তখন তাকে কাছে পান না। কেননা আপনার অভাবে তার নিকট পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বা কোনো পোষা প্রাণী বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে আপনি হয়ে পড়বেন মানসিক অবসাদগ্রস্ত একজন মানুষ।
আপনার তুলনায় ফেসবুকের গুরুত্ব বেশি: অনেকসময় দেখা যায় যে, আপনার সঙ্গীর নিকট আপনার তুলনায় ফেসবুকের গুরুত্বই বেশি এবং একসঙ্গে থাকলে আপনার সঙ্গী সারাক্ষণ মোবাইল নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এ বিষয়ে গবেষক ব্রেওর বলেন, ‘আমরা মোবাইল এবং ইন্টারনেটের অলীক এক জগতে বন্দী হয়ে গেছি। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিষয় আমাদের কাছে চরম উপভোগ্য হয়ে উঠেছে এবং আমরা এমন এক সমাজের অংশ যেখানে সামনাসামনি কোনো ভাবের আদান-প্রদান ঘটে না।’ এ ধরনের দাম্পত্য সমস্যা এড়াতে আপনি এবং আপনার সঙ্গী উভয়ই একসঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে আপনারা দুজনেই শোবার ঘর বা খাবার টেবিলে মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করে দিন। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও মোবাইল এবং কম্পিউটারবিহীন এক জগৎ তৈরি করুন এবং একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করুন।
সঙ্গীর প্রতি বিরক্তি চলে আসা: অনেকসময় আপনার সঙ্গীর হাঁচি-কাশির মতো স্বাভাবিক শব্দেও আপনি বিরক্ত হয়ে যান। এ বিষয়ে ড. ব্রেওর বলেন, ‘মানসিক চাপ এবং অবসাদের কারণে আপনার সঙ্গীর ছোটখাটো নানা বিষয় আপনার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনার অপছন্দের বিষয়গুলো তাকে খুলে বলুন। প্রাথমিক পর্যায়ে সে সামান্য মন খারাপ করলেও তা হয়তো দাম্পত্য কলহে রূপ নেবে না। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গী কোনো অন্তর্যামী নন। সুতরাং প্রয়োজনীয় যেকোনো বিষয় তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন।’