গাজায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল তাদের নিরলস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় বুধবার অন্তত ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারের ওপর বোমা হামলায় সাত নারী ও দুই শিশুসহ কমপক্ষে ১২ জন নিহত হন।
ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে রূপান্তরিত আল-আহলি স্টেডিয়াম বুধবার আরেকটি গণহত্যার স্থান হয়ে ওঠে। জাতিসংঘের অভিযোগ, ইসরায়েলের সেনারা গাজা সিটির ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর উপর সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেছেন, গাজার জনগণকে তাদের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে সরানো হচ্ছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলের ভেতরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৪১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার লাশ চাপা পড়ে আছে।
এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে এক হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল প্রতিশোধের যুদ্ধ শুরু করে। সে সময় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করে, যার মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি এখনও গাজায় রয়ে গেছে।
এদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ কার্যক্রমকে বিশ্বজুড়ে নেতারা নিন্দা জানিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, “যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, তারা মানবতার যোগ্য নয়।”
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা গাজার জনগণের সঙ্গে আছি। এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।”
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে আল জাজিরাকে বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নীরব আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। জুলাইয়ে ১৪২টি দেশ যে “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা” সমর্থন করেছে, তার ভিত্তিতেই এই উদ্যোগ চলছে।
অন্যদিকে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ওয়াশিংটন “আশাবাদী, এমনকি আত্মবিশ্বাসী” যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের হাতে পৌঁছে গেছে।
তবে পূর্ববর্তী শান্তি প্রচেষ্টা বারবার ভেস্তে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। হামাসের ওই নেতারা ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এর আগে গত ১৮ মার্চ নেতানিয়াহু একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেন এবং পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপ করেন। ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ও অনেকে না খেয়ে মারা যান। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার পর অন্যদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় নিজ দেশেও প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার সময় শত শত মানুষ তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।