১৯৮৭ সালের ২৪ জুন। আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে খুব সাধারণ এক ঘরে জন্ম নেয় লিওনেল আন্দ্রেস কুচিত্তেনি মেসি। পৃথিবীতে পাঠানোর সময় তাকে দেয়া হলো ফুটবল খেলার জন্য ক্ষুরধার মস্তিষ্ক, একজোড়া অসাধারণ পা। আর সঙ্গে দেয়া হলো হরমোনাল কিছু জটিলতা।
১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট এ আর্জেন্টাইন তারকার প্রতি আগ্রহ দেখালেও সেসময় মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল তারা। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে তখন প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার। পরে, মেসির জাদুতে মুগ্ধ হয়ে এ দায়িত্ব নেয় বার্সেলোনা।
বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির অসাধারণ প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। তখন হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করেন। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান।
এরপরের গল্পগুলো সবারই জানা। অপবাদ ছিল হেডে গোল করতে পারেননা, সেটা করেছেন ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। যে গোলটাকে মেসি নিজেই বলেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা গোল। অপবাদ ছিল ইংলিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে মেসি নিষ্প্রভ। কিন্তু বর্তমান বলছে ইংলিশ ফুটবলের টপ সিক্স ক্লাবের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার একজন এ আর্জেন্টাইন।
এছাড়া, সবচেয়ে বড় অপবাদ ছিল বার্সেলোনায় মেসি যতটা উজ্জ্বল, ততটা আলো ছড়ায়নি আর্জেন্টিনার জার্সিতে। অথচ ২০২৫ সালে এসে মেসিকে ক্লাবের জার্সিতে যত আপন লাগে, আর্জেন্টিনায় তারচেয়ে বেশি মোহনীয় মনে হয়।
এরপর ফিনালিসিমা আর ২০২২ সালের সে অসামান্য বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার। সেখান থেকে মেক্সিকো ম্যাচে প্রবল চাপের মুখে ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শট– আরও একবার বিশ্বকাপজয়ী এ তারকা হয়ে উঠলেন সে পার্থক্য গড়ে দেয়া মানুষটা। এরপর বাকি সব জটিলতা পেরিয়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসি হলেন অমর। হয়ে উঠলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারও।
ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসির বয়স ৩৭ পেরিয়ে আজ ৩৮। সব পেয়ে যাওয়া মানুষটা এখনো খেলছেন। লক্ষ্যটা সম্ভবত ২০২৬ বিশ্বকাপ। নিজেকে যেখানে অমর করেছেন, সে মঞ্চ থেকেই বিদায় নিতে চাইছেন এলএমটেন। রোজারিওর যে ছেলেটা ফুটবল দিয়ে অমর হয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসে, তার সঙ্গে আমাদের গল্পটাও হয়ত মিশে যাবে, শেষবারের মতো।