কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাবাহী ট্রাকচাপার দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। আজ শনিবার (২৬ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি ইটভাটার মেসে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে ঘুমন্ত ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও দু’জন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের করিমপুরের (দোসরী) কাজী অ্যান্ড কোং ইটভাটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রমিকরা ভাটার শেডে ঘুমিয়ে ছিলেন। নিহত সবার বাড়ি নীলফামারী জেলার জলঢাকায়।
নিহতরা হলেন- নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের সুরেশচন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিতচন্দ্র রায় (৪৫), তার ভাই তরুণচন্দ্র রায় (২৫), একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম (২৮), অমলচন্দ্র রায়ের ছেলে দীপুচন্দ্র রায় (১৯), কিশোরচন্দ্র রায়ের ছেলে শংকরচন্দ্র রায় (২১), রাম প্রসাদের ছেলে বিপ্লব রায় (১৯), কামিক্ষার ছেলে অজিত রায় (২০), শিমুলবাড়ি গ্রামের মনোরঞ্জনচন্দ্র রায় (১৯), একই গ্রামের খোকাচন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণালচন্দ্র রায় (২১), পাঠানপাড়া গ্রামের নূর আলমের ছেলে মোরসালিন (১৮), একই গ্রামের ফজলুল করিমের ছেলে শামসু (১৮), রাজবাড়ি গ্রামের খোকাচন্দ্র রায়ের ছেলে বিকাশচন্দ্র রায় (২৮) এবং ধলুচন্দ্র রায়ের ছেলে কনকচন্দ্র রায় (২৫)। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রঞ্জিতচন্দ্র রায়।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, কাজ শেষে রাতে ব্রিকফিল্ডের লেবার শেডে ২২ জন শ্রমিক ঘুমিয়েছিলেন। ভোর ৫টার দিকে ব্রিকফিল্ডের জন্য সিলেট থেকে আনা একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-০১১৪) থেকে কয়লা আনলোড করার সময় হঠাৎ সেটি উল্টে লেবার শেডের ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর পড়ে। এতে কয়লা বোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। মারাত্মক আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর প্রত্যেকের লাশ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। ট্রাকের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ব্রিকফিল্ডের পরিচালক এনায়েত হোসেন সোহেল পলাতক রয়েছেন।
এদিকে ১৩ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় শুক্রবারই দুটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে। একটি জেলা প্রশাসন ও অপরটি পুলিশ প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের চার সদস্যের কমিটিকে সাত দিনের এবং পুলিশের তিন সদস্যের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১ লাখ টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি