নতুন প্রজন্মকে শুদ্ধভাবে বাংলা চর্চা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারনের আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ” বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও ২০৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তোমরাই মূল ভূমিকা রাখবে। একুশ মানে মাথা নত নয়, একুশ মানে চেতনা। একুশ মানে অনুপ্রেরণা। যারা নতুন প্রজন্ম আছো তোমাদের কাছে আশা করি তোমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িকতায় তোমরা বেড়ে উঠবে। এটাই হবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মতৃভাষা দিবসের অঙ্গিকার।”
আজ রবিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত শিশু একাডেমির মিলনায়তনে ‘ শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাতপর্য’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী রওশন আক্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু একাডেমির মহাপরিচালক জ্যোতি লাল কুরী।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, আজকের শহীদ দিবস ও মাতৃভাষা দিবসকে ১৯২টি দেশ মর্যাদার সাথে পালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই একযুগ শাসন আমলে বাংলাদেশ বদলে গেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সারাবিশ্বে প্রশংশিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশ বিভাগের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বুজতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও আবার নতুন শোষণের কবলে পড়েছে দেশ। তিনি ১৯৪৭ সালেই বাংলা ভাষাকে ততকালীন পূর্বপাকিস্তানের লেখা ও আইন- আদালতের ভাষা করার দাবী করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করা আন্দোলনের মূল সংগঠক। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার পক্ষে যে লিফলেট বিতরণ করা হয়, সেখানে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরকারী। তিনি ভাষার দাবীতে আন্দোলন করে দুইবার গ্রেফতার হন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ছাত্রীরা রাজপথে মিছিল করেছিল। জাতির পিতা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রী অংশগ্রহণ নিয়ে লিখেছেন, বহু ছাত্র গ্রেফতার ও জখম হল।কয়েকজন ছাত্রীও মার খেয়েছিল। মুসলিম গার্লস স্কুলের ছাত্রীরা সকাল ১০ টায় স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত আর চারটায় শেষ করতো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন আল বদর, রাজাকার ব্যতিত সাড়ে সাত কোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। কেউ যদি মনে করে কোন এক অজ্ঞাতনামা মেজরের ঘোষণা পাঠের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো তাহলে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের উচ্চতা, গভীরতা ও ব্যাপকতার সাথে কারো তুলনা হয় না। খলনায়ক কিন্তি খলনায়কই থাকে, খলনায়ক যেমন কোনদিন নায়ক হতে পারে না। তেমনই কোন পাঠকই কিন্তু ঘোষক হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধীতা করেছিলো, তারাই কিন্তু তাদের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব কাজী রওশন আক্তার বলেন, মাতৃভাষার আন্দলোন যে কত গভীর তা দিনে দিনে বুঝেছি। তিনি নতুন প্রজন্মের শিশুদের কাছে শুদ্ধ ভাবে মাতৃভাষা বলার আহবান জানান। এ ছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদায় যেনো বাংলাভাষা ব্যবহার হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ঢাকা কেন্দ্র , জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের শিশুদের পরিবেশনায় ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।