দুধকে বলা হয় সুপারফুড। ছোট-বড় সকলের জন্যই গরুর দুধ বেশ উপকারী খাবার। কিন্তু খাঁটি দুধ সর্বত্র মেলে না। ক্রমশ বেড়ে চলেছে ভেজাল দুধের দৌরাত্ম। এক সময় শুধু পানি মিশিয়ে ভেজাল করা হলেও, বর্তমানে গরুর দুধে ডিটারজেন্ট পাউডার, ফরমালিন, গ্লুকোজ, সাবানসহ নানাকিছু মেশানো হচ্ছে। দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি, ঘনত্ব বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়িত্ব বৃদ্ধি কিংবা স্বাদ অপরিবর্তিত রাখার জন্য এসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ খাঁটি দুধের পরিবর্তে সরবরাহ করা হচ্ছে রাসায়নিক দুধ। ভেজাল দুধ উপকারের পরিবর্তে সৃষ্টি করছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
আপনি প্রতিদিন যার কাছ থেকে গরুর দুধ নিচ্ছেন, কিংবা দোখান থেকে নিচ্ছেন, তাদের থেকে খাঁটি দুধ দিচ্ছেন নাকি ভেজাল- বোঝার কিছু উপায় জেনে নেয়া যাক।
দুধে পানি মেশানো কিনা বোঝার উপায় হলো, ঢালু কোনো মসৃণ পৃষ্ঠের ওপর কয়েক ফোঁটা দুধ ফেলুন। খাঁটি দুধ হলে তা আস্তে আস্তে গড়িয়ে যাবে এবং দুধের সাদা দাগ দেখা যাবে। ভেজাল হলে দুধ দ্রুত গড়িয়ে যাবে এবং সাদা দাগ দেখা যাবে না।
এছাড়া ল্যাক্টোমিটার নামক একটি যন্ত্র দিয়ে পানি মেশানো দুধ সহজেই শনাক্ত করা যায়। দুধ থেকে মাখন তুলে নিলে বা দুধে পানি মেশালে দুধের আপেক্ষিক ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে। ল্যাকটোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই এটি ধরা যায়। এই পরিমাপক যন্ত্রের মধ্যে লাল রেখা রয়েছে, যেখানে দুধের ঘনত্ব পরিমাপের জন্য কিছু নম্বর দেয়া থাকে। যখন এই লাল রেখা ৩০ নম্বরে থাকে তার মানে হচ্ছে দুধে অন্যান্য পদার্থের মিশ্রণ খুব কম।
যদি এই দাগ ৩০ এর উপর যায় তাহলে পরিমাপক যন্ত্র অনুযায়ী ১/৪ পানি, আরো উপরে গেলে অর্ধেক পানি অর্ধেক দুধ। লাল রেখাটি এর থেকেও উপরে যদি উঠতে থাকে তাতে বুঝা যাবে অল্প দুধ আর বাকিটুকু মিশ্রিত পানি। যদি লাল রেখাটি ৩০ এর ঘরে থাকে তাহলে দুধে পানির পরিমাণ খুব সীমিত অথবা নেই। ল্যাক্টোমিটার যন্ত্রটি আপনি নিকটস্থ বাজারে হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন।
দুধে ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি গ্লাসে ৫ থেকে ১০ মিলিলিটার দুধ এবং সমপরিমাণ পানি নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকান। যদি ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো দুধ হয় তাহলে তাতে ঘন ফেনা দেখা যাবে। খাঁটি দুধে খুব পাতলা ফেনা সৃষ্টি হবে।
উচ্চ মাত্রার ভেজাল দিয়ে খাঁটি দুধের আদলে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ, যা সিনথেটিক দুধ হিসেবে পরিচিত। সিনথেটিক দুধের স্বাদ তেতো। সহজেই এই ভেজাল দুধ চেনার উপায় হচ্ছে, হাতের আঙুলে নিয়ে একটু ঘষলে সাবানের মতো অনুভূতি হবে। এছাড়া দুধ গরম করার পর হলদেটে রঙ ধারণ করবে।
দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি কাচের গ্লাসে এক চা-চামচ দুধ নিন। এবার এতে হাফ চা-চামচ সয়াবিন বা অড়হর পাউডার মিশিয়ে মিশ্রণটি ঝাঁকান। ৫ মিনিট পর এতে একটি লাল লিটমাস পেপার ডুবান। ৩০ সেকেন্ড পর পেপারটি তুলে ফেলুন। যদি দেখেন লাল লিটমাস পেপারের ডুবানো অংশটি নীলচে রঙ ধারণ করেছে, তাহলে বুঝবেন দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে।
এদিকে গরুর দুধ স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারী। দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ–সবারই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।