অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এখনও সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারি নি। টেস্ট, প্রি–টেস্টের মূল্যায়ন পত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হবে।’
পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৪-এর স্থগিত পরীক্ষাসমূহ বাতিল করা হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এর আগে এদিন সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এইচএসসি ও সমমানের বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা ২ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাকি পরীক্ষাগুলো অর্ধেক প্রশ্ন উত্তরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অর্থাৎ আগে যদি একটি বিষয়ে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো সেখানে এখন একই সময়ে চারটি প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে।
এ সিদ্ধান্তের পর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একটি দল পরীক্ষা বাতিলের এক দফা দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
পরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এইচএসসির বাকি থাকা পরীক্ষা বাতিলে পরীক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান সমন্বয়ক হাসনাত।
ওই দিন রাতেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাইকে অবরুদ্ধ করে পরীক্ষা বাতিলে বাধ্য করা হয়েছে।’
এদিকে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়। বিভিন্ন গোষ্ঠী রূপ বদলিয়ে অযৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে নামছে। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের আন্দোলনের পথ সঠিক নয়।’
গত ৩০ জুন সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই ও ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষে ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তা-ও স্থগিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অনেক জায়গায় বল প্রয়োগ করে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি দৃষ্টিকটু।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২১ সালের আগের যে বইগুলো আছে সেগুলো ছাপানো হবে। সেখানে বইয়ের কিছু টেক্সট পরিবর্তন করা হবে।পয়লা জানুয়ারির মধ্যে বই দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’