দাম্পত্য জীবনে পাপিয়া খাতুনের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবার প্রত্যাশা পুত্র সন্তানের। তৃতীয়বার যদি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তাহলে তালাক দেবেন স্বামী। ছেলে সন্তানের আশায় থাকা পাপিয়া খাতুন এবারো কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় তালাকের ভয়ে প্রসবের পরই নবজাতককে হাসপাতালের এক রোগীর স্বজনের কাছে রেখে পালিয়ে গেছেন জন্মদাত্রী মা ও তার স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই নবজাতককে দত্তক নিতে ছুটে আসেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জরুরি বিভাগে পাপিয়া খাতুন নামে এক প্রসূতিকে আনা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী পাপিয়া খাতুনকে ভর্তি করেন সঙ্গে আসা স্বজনরা। সকাল পৌনে ৮টার দিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষেই পাপিয়া খাতুন একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন। চিকিৎসক পাপিয়াকে ভর্তি করে গাইনি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ভর্তিরত অবস্থায় বিলকিস বানু নামে এক নারীর কাছে কন্যা সন্তান রেখে হাসপাতাল থেকে চলে যান প্রসূতি ও সঙ্গে থাকা এক স্বজন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ ও সদর থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী। পরে নবজাতকটি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা খাতুনের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়া গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী বিলকিস বানু জানান, গত ২দিন যাবত আমার মেয়ে শারমিন খাতুন গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এ দু-দিন মেয়ের সঙ্গেই আছি। হঠাৎ বৃহস্পতিবার সকালে গাইনি ওয়ার্ডে এক নারী কয়েকজনকে নিজের সদ্য জন্ম হওয়া কন্যাসন্তানটি দিতে চান। তারা সবাই ঠাট্টা করছেন বলে ধারণা করেন। আমার মেয়ের জন্য সকালের নাশতা কিনতে যাচ্ছিলাম।
এ সময় ওই নারী তার কন্যাসন্তানটি আমাকে দিয়ে বলেন, আমার দুটা কন্যাসন্তান রয়েছে, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ি সবার ইচ্ছে পুত্র সন্তানের। এবার কন্যাসন্তান হলে স্বামী তালাক দেবেন বলে জানিয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি যাওয়া চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এ সন্তান আপনার কাছে দিয়ে গেলাম। মেয়েকে ভালোমতো দেখাশোনা করবেন। এ কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।
তিনি আরো বলেন, ওই নারীর সঙ্গে আরো একজন ছিলেন। তিনি কন্যা সন্তানের নানি বলে পরিচয় দিয়েছেন। আমি তাদের অনেক বুঝিয়েছি, তাও তারা সন্তান আমার কাছে রেখে দ্রুত চলে যান। আমি তাৎক্ষণিক নবজাতকটি নিয়ে গাইনি ওয়ার্ডের নার্সের কাছে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনাটি জানাই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, জরুরি বিভাগের মধ্যেই ওই প্রসূতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি কন্যাশিশু জন্ম দেন। এক রোগীর স্বজনের কাছে জানতে পেরেছি, ওই দম্পতির দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আবারো কন্যা সন্তান হলে স্বামী তালাক দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাই, বাচ্চাকে ওই নারীর কাছে রেখে পালিয়ে গেছেন তারা। নবজাতকটি বর্তমানে সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। ওই নারীর পরিচয় শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ জোহরা বলেন, কন্যা শিশুটিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানেই আপাতত তার পরিচর্যা হচ্ছে। মা ও পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও শিশুটির সর্বোত্তম কল্যাণের জন্য আইন এবং বিধি বিধান মেনে যতটুকু করা সম্ভব আমরা তা করবো।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় তারা যে নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন তা যাচাই করা হয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ছবি দেখে ওই নারী ও তার স্বজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের পেলে নবজাতকটি হস্তান্তর করা হবে।