কক্সবাজারের উখিয়ায় এক রোহিঙ্গা নেতাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উখিয়ার হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২০) এম-২৭ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম করিম উল্লাহ (৪১)। তিনি ওই ব্লকের সাব–মাঝি (নেতা) ছিলেন।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, নিহত করিম উল্লাহ একসময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসার) কর্মী ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি আরসা ত্যাগ করেন। মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনে (আরএসও) যোগ দিয়েছেন, এমন সন্দেহে করিমকে গলা কেটে হত্যা করেছেন আরসার লোকজন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন বলেন, মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ওই রোহিঙ্গা মাঝিকে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর দুর্গম পাহাড়ের আশ্রয়শিবিরে ঢুকে চাঁদাবাজি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও মাদক চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আরসা ছেড়ে যাঁরা আরএসও অথবা নবী হোসেন গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন, সেসব রোহিঙ্গাদের তুলে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। চলতি মাসে আরসার সন্ত্রাসীরা তিন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাতে আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ৪ জানুয়ারি রাতে উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪ বর্ধিত) ঘর থেকে তুলে নিয়ে মো. ফয়সাল (২৯) নামের এক রোহিঙ্গা তরুণকে গুলিতে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের সি-২ ব্লকের রোহিঙ্গা মো. রফিকের ছেলে। নিহত ফয়সালও চার মাস আগে আরসা ছেড়ে আরএসওতে যোগ দিয়েছিলেন।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে আশ্রয়শিবিরে ৬৭টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৮১ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ২২ জন আরসার সদস্য, ৭ জন আরএসওর সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।